আদর্শ খামারী জুড়ির সালেহা আক্তারের সাফল্যের কথা

Published: 16 November 2020

জুড়ি প্রতিনিধি : আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, লুকলুকি, নারিকেল, সুপারী, কমলা, পেয়ারা, মাল্টা, তেজপাতা, আগর, বনজ গাছ, কলা, সীম, লাউ, টমেটু, ক্ষিরা, শসা, আলু, ফরাশ, পেঁপে, বেগুন, আদা, বিভিন্ন জাতের লেবু, বনঢুলা, বিভিন্ন প্রজাতির মরিচ, হলুদ, আনারস, বাঁশ, হাঁস, মোরগ, কবুতর, গরু, ছাগল, পুকুরে মিশ্র মাছ কি নেই তার বাড়িতে? সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও সব কিছুর সমন্বয়ে একটি খামার গড়ে তুলে নিজেকে একজন আদর্শ খামারী হিসেবে প্রতিষ্টিত করেছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধামাই গ্রামের বাসিন্দা কাতার প্রবাসী আসুক উদ্দিনের স্ত্রী সালেহা আক্তার (৩৫)।


মাদারীপুর জেলার শিবচরের মেয়ে সালেহা আক্তার ১৩বছর পুর্বে ফেসবুকের কল্যাণে আসুক উদ্দিনের সাথে পরিচয় থেকে পরিণয়ে জড়িয়ে জুড়ীতে চলে আসেন। প্রায় ৫কিয়ার (১৫০ শতাংশ) জমি রয়েছে স্বামীর বাড়িতে। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ আছে। বাড়ির খালি জমি ও ঘরের ছাদে সালেহা কিছু কিছু সবজি চাষ শুরু করেন। স্থানীয় সিআইজি (কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) সভাপতি আবুল হোসেন বাড়িতে খামার করার জন্য সালেহাকে উৎসাহিত করেন। এগিয়ে আসেন পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুরঞ্জিত ধর রনি। উপজেলা কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় সালেহার বাড়িটিকে খামার বাড়িতে পরিণত করতে সুরঞ্জিত ধর রনি সার্বিক পরামর্শ ও তদারকি চালিয়ে যান। বর্তমানে সবজি, হাঁস-মোরগের ডিম, গরুর দুধ ও পুকুরের মাছ বিক্রি থেকে নিয়মিত খরচ বাদ দিয়ে বৎসরে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারেন সালেহা। তাছাড়া আত্নীয়-স্বজনও পরিজনদের মধ্যে তার উৎপাদিত পণ্য উপহার হিসেবে বিতরণ করেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে মনোরম পরিবেশে সালেহা সৃষ্ট ক্ষুদ্র খামারটি নজর কাড়ে। অনেক শ্রম, সাধনা ও পূঁজি বিনিয়োগে খামারটি এখন নিয়মিত আয়ের একটি উৎস্য হয়েছে। অন্যান্যদের জন্য এ খামারটি একটি উদাহরণ হতে পারে।
জানতে চাইলে সালেহা আক্তার বলেন, ‘আমার কোন ছেলে নেই, দু’টি মেয়ে আছে। স্বামী প্রায় ২৫ বছর থেকে বিদেশে আছেন। সারাজীবন তিনি বিদেশ থাকবেন না, তাছাড়া শরীর স্বাস্থ্যও একরকম থাকবেনা। তাই ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আমি বাড়িতে খামার গড়ে তুলি। মেয়েদের লেখাপড়া করানো, বড় হলে বিয়ে দেয়া সব মিলিয়ে অনেক খরচ। এখন থেকেই মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি। খামারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির পাশাপাশি মানুষের মাঝে বিতরণও করি। কেননা, মানুষের দোয়ায় অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারব’।

পূর্বজুড়ী ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুরঞ্জিত ধর রনি বলেন, যে কেহ সালেহার খামার বাড়ি পরিদর্শন করে নিজেরা এভাবে খামার গড়ে তুলতে পারেন।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, সালেহা খামারে ট্রাইকো কম্পোস্ট ও কেঁচু সার উৎপাদন ও ব্যবহার করেন। কোন কীটনাশক ব্যবহার হয়না।
বুধবার বিকেলে সালেহার খামার বাড়িটি পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রপসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার-এর উপপরিচালক মো: লুৎফুর বারী ও মৌলভীবাজার জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা ড. শাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকী। মো: লুৎফুর বারী বলেন, এক সময় মানুষ বাড়িতে সবজি চাষ করতো নিজের খরপোষের জন্য, এখন বাণিজ্যিক ভাবনায় লোকজন খামার গড়ে তুলছেন। প্রকৃত পক্ষে একটি খামার করতে যা যা লাগে তার সবই সালেহার খামারে আছে। এ খামার দেখে আমি খুবই আনন্দিত। সাালেহা নি:সন্দেহে একজন আদর্শ খামারী। তার বাড়ি একটি বাণিজ্যিক খামারে পরিণত হয়েছে। তিনি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বৎসরে লক্ষাধিক টাকা আয় করতে পারেন। যাদের বাড়িতে সামান্যতম জায়গা আছে তারা সালেহার মত এভাবে ছোট ছোট খামার তৈরি করতে পারেন। এতে বিষমুক্ত, পুষ্টিযুক্ত খাদ্যের যোগান হবে, মূল্যও স্বাভাবিক থাকবে। আমরা কোন জায়গা খালি না রেখে কাজে লাগালে এক সময় আমাদের স্বচ্ছলতা আসবে। এভাবে খামার করতে যারা এগিয়ে আসবেন কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।