পদ্মাপাড়ে কুয়াশা কেটে আলোর ঝিলিক

Published: 11 December 2020

সত্যজিৎ ঘোষ :  কুয়াশা কেটে আলোর ঝিলিক নাওডোবার আকাশে।

সূর্যের আলোয় ধূসর রঙের পদ্মা সেতু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে থাকে। সেতু দেখতে আসা মানুষের মনে আনন্দের ঝলকানি। নানা বাধা ও আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের জয় হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৪১ নম্বর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ রূপ। এই বহুল প্রতীক্ষিত সাফল্য চোখ মেলে দেখার জন্য আজ শুক্রবারও হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা প্রান্তে। তবে নিরাপত্তার কারণে সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকার ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেননি।

দর্শনার্থীরা সেতুর সংযোগ সড়ক, রেল প্রকল্প ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সময় কাটিয়ে ফিরে গেছেন। অনেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়েও সেতু দেখার জন্য এসেছেন। সেখানেও সেনাবাহিনীর বাধার কারণে সেতুর কাছে যেতে পারেননি। দূর থেকে সেতু দেখে তাঁরা ফিরে গেছেন। নিরাপত্তা ভেদ করে অনেককে দেখা গেছে নাওডোবায় সেতুর প্রান্তে সেলফি তুলছেন। ঢাকার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাতুল সাহা। তিনি বন্ধুদের নিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে শুক্রবার জাজিরার নাওডোবায় এসেছেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীদের বাধার কারণে সেতুর কাছে যেতে পারেননি। সংযোগ সড়কে সময় কাটিয়ে দুপুরের দিকে ফিরে যান। রাতুল সাহা বলেন, ‘আমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। সেতুটির জন্য আমরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছিলাম।

আজ স্বপ্ন জয় হয়েছে। পুরো সেতুটি দেখার আগ্রহ নিয়ে জাজিরায় এসেছিলাম। মুন্সিগঞ্জ প্রান্তে দেখেছি, নিরাপত্তার কারণে জাজিরা প্রান্তের অংশ দেখা হলো না।’ রাজবাড়ী থেকে ১৫ জনের একটি দল নিয়ে সেতু দেখতে জাজিরায় এসেছেন মোবারক হোসেন। তাঁরা শিবচরের কাঁঠালবাড়ি থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে সেতুর কাছে যান। নদীতে সেনাসদস্যদের টহল থাকায় সেতুর একেবারে কাছে যেতে পারেননি। দূর থেকেই সেতু দেখেছেন, ছবি তুলেছেন। মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারছি না নিজেদের টাকায় এত বড় অবকাঠামো বানাতে পারব। বিজয়ের মাসে এমন বিজয় আমাদের উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত করেছে। কাল আসতে পারিনি, ইতিহাসের সাক্ষী হতে আজ এসেছি। এখন শুধুই অপেক্ষা সেতু পারাপার হওয়ার। পদ্মা সেতু এই জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবন–জীবিকা বদলে দেবে। পদ্মাপাড়ের মানুষের অনেক আবেগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে সেতুটিতে। তাই সেতুটি পুরো দৃশ্যমান হওয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বাসটাও বাঁধভাঙা। মো. আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া, ইউএনও, জাজিরা উপজেলা, শরীয়তপুর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবায় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মার বুকে সেতু দাঁড়ায়। এরপর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে তিন বছরেরও বেশি সময় লেগেছে বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে। বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়। এখন চলছে সেতুর প্রথম তলায় রেলওয়ে স্ল্যাব আর দ্বিতীয় তলায় রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু এই জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবন–জীবিকা বদলে দেবে। পদ্মাপাড়ের মানুষের অনেক আবেগ আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে সেতুটিতে। তাই সেতুটি পুরো দৃশ্যমান হওয়াকে ঘিরে উচ্ছ্বাসটাও বাঁধভাঙা। জাজিরার মানুষের সঙ্গে আমিও ব্যক্তিগতভাবে এ আনন্দ উদ্‌যাপনে শরিক হয়ে আতশবাজি করেছি, ফানুস উড়িয়েছি।’