জুড়ীর ফুলতলা সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত ‘সীমান্ত হাট’ যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা

Published: 4 December 2021

বড়লেখা প্রতিনিধি :

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চালু হচ্ছে ২০১৭ সালের দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের সমঝোতা চুক্তির ষষ্ঠ ‘বর্ডার হাট’ (সীমান্তহাট)। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের পশ্চিম বিটুলী সীমান্ত পিলার ১৮২৭ এর ম্যানস ল্যান্ডে এ সীমান্ত হাটের বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ হাট চালু হলে স্থানীয় মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দুই দেশের প্রয়োজন মাফিক আমদানী-রপ্তানিরও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

২০১৭ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর হয়। এতে তৎকালিন চলমান চারটি বর্ডার হাটের সঙ্গে আরো ৬টি বর্ডার হাট যুক্ত করার কথা উ¬েল্লখ করা হয়। এ ৬টি বর্ডার হাটের একটি মৌলভীবাজারের জুড়ীর পশ্চিম বটুলী ও ভারতের উত্তর ত্রিপুরার পালবস্তী সীমান্তের ওই হাটটি। কিন্তু ভুমি নির্ধারণ ও নানা অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশ অংশের পশ্চিম বটুলিতে তা বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়।

যৌথ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোমানা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক, ইউএনও সোনিয়া সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওছার দস্তগীর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার, সহকারী কমিশনার ভূমি রতন কুমার অধিকারী, জুড়ী থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী, কমলগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি, ফুলতলা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ, বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে ভারতের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন উত্তর জেলা ত্রিপুরার এডিশনাল ডিএম ডিবি রিং এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। ভারতীয় প্রতিনিধি দলে সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিএসএফের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ সীমান্ত হাটে কাপড়, সাবান, সবজি,ফল, মসলা, শিশুদের জিনিসপত্র, গৃহস্থালির নানা জিনিসপত্র, কৃষিজাত পণ্য, চাল, ডাল, তেল, ঘি, মশার কয়েল, প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসপত্র, জুতা, খেলনা, বিভিন্ন ধরনের শাড়ী, গামছা, লুঙ্গি, জুয়েলারি সামগ্রী, বেকারী পন্য, সিরামিকস ও কসমেটিকস সামগ্রী বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রোমানা ইয়াসমিন বলেন, সীমান্ত হাট স্থাপনের জন্য জুড়ী সীমান্তের ফুলতলা ইউনিয়নের পশ্চিম বটুলী নোম্যান’স ল্যান্ডে জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে উভয় দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ সীমান্ত হাট চালু হতে যাচ্ছে। সীমান্ত বাজার স্থাপনের লক্ষ্যে শুক্রবার দুই দেশের প্রশাসনিক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত হাটের কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ সীমান্ত হাটে বাংলাদেশ-ভারতের সর্বোচ্চ ৫০ জন করে মোট ১০০ জন ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। উভয় দেশের ১৫০ জন করে মোট ৩০০ জন ক্রেতা বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। ব্যবসায়ীদের বাড়ি সীমান্ত এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হতে হবে। হাটকে ঘিরে পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সীমান্ত হাটের অনুমোদিত মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার পরিচয়পত্র ইস্যু করা হবে। হাটে প্রবেশের জন্য উভয় দেশের দুই দিকে থাকবে দুটি গেট। এছাড়া থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, শৌচাগার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়, দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনগণের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।