চোখ বন্ধ করলে দেওয়া হতো ইলেকট্রিক শক!
পোস্ট ডেস্ক : টোগলে সিংকাম নামে ২১ বছরের এক তরুণ অরুণাচল প্রদেশের আপার সুবর্ণসিঁড়ি জেলার বাসিন্দা। তিনি পোর্টার হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভারত-চীন সীমান্তে অবস্থিত তাকসিং এলাকার বাসিন্দা টোগলে। এই ভূখণ্ড সম্পর্কে জানাশোনার কারণে তিনি মাঝেমধ্যে দুর্গম অঞ্চলের সরকারি এবং সামরিক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন।
তবে চলতি বছরের ১৯ মার্চ তাঁর জীবনচিত্র পাল্টে যায়। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত-চীনা সেনারা মুখোমুখি হওয়ার কয়েক মাস আগে তাঁকে চীনা লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) অপহরণ করে। তিনি যখন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে চীনা ভূখণ্ডে চলে যান, তখন পিএলএর সৈন্যরা তাঁকে বন্দি করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টোগলি সিংকামকে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে। তাঁর গলার সঙ্গে হাত বেঁধে ফেলা হয়। চোখ দুটিও বেঁধে রাখা হয়। এমনই তথ্য জানা যায় ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে।
এপ্রিলের ৭ তারিখে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর সম্প্রতি টোগলি সিংকাম ইন্ডিয়া টুডে টিভিতে সাক্ষাৎকার দেন। পিএলএর হাতে বন্দিদশায় কাটানো সময়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি ১৯ মার্চ ভারতের ভূখণ্ডে ছিলাম। শিকারের জন্য সীমান্ত অঞ্চলে নিয়মিত যাই। কিন্তু ওই দিন পিএলএর কর্মকর্তরা দ্রুত এসে আমাকে বন্দি করে। আমি পালাতে পারিনি, কারণ তারা সংখ্যায় ছিল প্রচুর।
তিনি আরো বলেন, তারা আমাকে মেঝেতে বসতে বাধ্য করে। ঘাড়ের পেছনে হাত বেঁধে, মুখে কাপড় বেঁধে আমাকে নিয়ে যায়। চোখ খোলার পর দেখি, আমি একটি চীনা শিবিরে। পরে আমাকে একটি বিছানার সঙ্গে বেঁধে রেখে পেটানো হয়। এরপর আরো একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য কোনো জায়গায়। সেখানেও আমার মুখ বাঁধা ছিল এবং আমাকে আবারও পেটানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টোগলেকে চায়নিজ গাড়িতে করে তাদের অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তিনি চোখ খুললেন তখন তিনি দেখতে পেলেন, একটি অন্ধকার ঘরে কাঠের চেয়ারের ওপর বসে আছেন তিনি। পিএলএর অপহরণকারীরা তাঁকে লাথি মারে, থাপ্পড়ও মারে। ইলেকট্রিক শকও দেয়।
টোগলে সিংকাম বলেন, পুরো ১৫ দিন আমাকে একটি অন্ধকার কক্ষে রাখা হয়। আমাকে কখনো চোখ বন্ধ করতে দেওয়া হতো না। সেখানে চড়-থাপ্পড়, মারধর, ইলেকট্রিক শক… সব কিছু চলত। এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্যও চোখ বন্ধ করতে দেওয়া হয়নি। আমার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে রাত থেকে দিনের সময় বলতে পারতাম না। আমাকে বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়েছিল। ‘আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন গুপ্তচর’- এটি স্বীকার করাতে তারা আমাকে জোরাজুরি করে। তারা আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করত।
অত্যাচার এখানেই শেষ হয়নি। টোগলে সিংকাম বলেন, আমাকে প্যাকেটজাত খাবার দেওয়া হতো এবং শুধু টয়লেট ব্যবহারের জন্য উঠতে দেওয়া হতো। আমার হাতটি সব সময় চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা ছিল। এতক্ষণ কেউ চোখ বন্ধ না করে বসে থাকতে পারে না। তবে যদি চোখ বন্ধ করতাম, তাহলে তারা আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিত। তার পরও আমি হাল ছাড়িনি।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-চীন সীমান্তে এমন কিছু বোর্ড রয়েছে, যা দিয়ে স্থানীয় সীমানা চিহ্নত করা। স্থানীয়দের সুরক্ষিত এবং সীমানা নিশ্চিত করতে কয়েকটি নির্দিষ্ট কৌশলগত স্থানে স্থাপন করা হয় ওই বোর্ডগুলো। টোগলে সিংকাম ভারতের গোয়েন্দা ব্যবস্থার একটি অংশ ছিল, তা প্রমাণ করার জন্য এই বোর্ডগুলোর ছবির সঙ্গে তাঁর হাতের লেখা মেলানোর চেষ্টা করেছিল চীনা বাহিনী।
টোগলে সিংকাম বলেন, তারা (চীনা বাহিনী) আমার হাতের লেখার পরীক্ষাও করেছিল। আমাকে লেখার জন্য শিট দেওয়া হয়েছিল। তারা নিশ্চিত হতে চেয়েছিল যে সীমান্তের লেখাগুলো আমি লিখছি কি না এবং কোথাও বোর্ড লাগিয়েছি কি না। তবে আমার হাতের লেখাগুলো কোনো বোর্ডের সঙ্গে মেলেনি।
অমানবিক নির্যাতনের পর অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া টোগলে সিংকামকে ফিরিয়ে দেয় চীন। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তাঁকে ভারতীয় সেনার হাতে তুলে দেয় বলে জানা যায় দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে।