নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা দেবে সহিংসতা, জনঅসন্তোষ!
পোস্ট ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কিছু মার্কিনি। এমন কি নাগরিক অসন্তোষ বা জাতিগত সংঘাতও সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য কমিউনিটি ওয়াচ গ্রুপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কেউ কেউ কাজ করছেন উত্তেজনা প্রশমন করা নিয়ে। আবার কেউ কেউ অস্ত্র কিনছেন। প্রায় দুই ডজন ভোটারের দেয়া তথ্যে এসব কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তারা ওইসব ভোটারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ডাটা জরিপ আকারে দেখিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সবচেয়ে কমন আতঙ্ক হলো, এবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের মধ্যে ৩রা নভেম্বরের নির্বাচনের ফল অনিষ্পন্ন থাকতে পারে।
এর ফলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হতে পারে। তা এক পর্যায়ে নাগরিক অসন্তোষ, এমনকি জাতিগত সংঘাতে রূপ নিতে পারে। এমন উদ্বেগ আরো বেড়েছে বৃহস্পতিবার মিশিগান থেকে। সেখানে রাজ্যের গভর্নরকে অপহরণ ও রাজ্যের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড পাওয়েলের মতো মার্কিনিরা এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, নাগরিক অধিকার রক্ষা, প্রাইভেট প্রপার্টি এমনকি জীবন রক্ষার জন্য তাদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে পক্ষ অবলম্বন করতে হতে পারে। নর্থ ক্যারোলাইনার ৬৪ বছর বয়সী পাওয়েল বলেন, আমি নিজে কোনো গ্রুপের অংশ নই। কোনো গ্রুপের অংশ হতে চাই না। আমি সাধারণ একজন মানুষ। খবর দেখছি। আর আসলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। তিনি বলেছেন, ‘এন্টিফা থাগস’দের নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। ইংরেজিতে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলরা ‘এন্টিফা থাগস’ শব্দ ব্যবহার করে থাকে ফ্যাসিস্টবিরোধী বাম ধারার কর্মীদের বর্ণনা করতে। তিনি আরো বলেছেন, প্রয়োজন হলে তিনি তার সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে প্রস্তুত আছেন।
আবার কিছু মানুষ নির্বাচনের দিনে বিদেশে ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। আবার কেউ গ্রামের বাড়িতে যেতে চান। অন্যরা প্রতিরোধ করতে অস্ত্র কিনেছেন। এফবিআইয়ের ডাটা অনুযায়ী, জুনে এক মাসে রেকর্ড পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি হয়েছে। এই সংখ্যা ৩৯ লাখ। ওয়াশিংটন এবং কলোরাডো রাজ্যের মতো রাজ্যগুলোতে এআর-১৫ স্টাইলের রাইফেলের গোলাবারুদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেনভারভিত্তিক আইনজীবী, যিনি নিজেকে শুধু ইউইং হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, আমি একটি একে-৪৭ কিনেছি। এই অস্ত্রটি অনেক দামী। এখনও চাইলে এটা কিনতে পারি।
কোন কোনো কমিউনিটি এবং গ্রুপ উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছে। তারা জানতে পেরেছে, অনেক মানুষের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এবং তারা এসব ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। অরিগনের পোর্টল্যান্ডে বামপন্থি কর্মী ড্রি মিলার (৩৭) যোগাযোগ করেছেন ডানপন্থি প্রাউড বয়েস-এর নেতাদের সঙ্গে। তার উদ্দেশ্য সংঘাত সমাধানে ওপেন লাইন যোগাযোগ স্থাপন। তিনি বলেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন আমাদের উচিত অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানানো। উল্লেখ্য, ড্রি মিলার কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার বিষয়ক গ্রুপ জুস-এর (জেইউআইসিই) একজন সংগঠক। তিনি বলেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে আমি এখন আর পিছনে দাঁড়াতে পারছি না। আমি এখন সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছি। এমন কথা প্রাউড বয়েস সম্পর্কে বলে থাকেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তারই কথা যেন প্রতিধ্বনি হলো মিলারের মুখে।
৬ই অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি একটি রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে যে সন্ত্রাসের হুমকিতে রয়েছে তার জন্য দায়ীরা নিঃসঙ্গ অপরাধী এবং তাদের রয়েছে ক্ষুদ্র ডমেস্টিক চরমপন্থি সেল। ওদিকে অক্টোবর মাসে নিউ আমেরিকা নামের থিংক ট্যাংকের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লি ড্রুটম্যান ও অন্যরা মিলে একটি জরিপ করেছেন। তা প্রকাশিত হয়েছে পলিটিকোতে। তাতে দেখা যায়, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ সহিংসতার পক্ষে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এই সংখ্যা দ্বিগুন।