সন্ত্রাসীদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার সাবেক সেনা সদস্য

Published: 13 October 2020

বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : বরগুনার আমতলী উপজেলার আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তরুণ সমাজকর্মী ও সাবেক সেনা সদস্য ইব্রাহিম খলিল সজল মোল্লা সন্ত্রাসীদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন। সজল আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের প্রাক্তন ইউপি সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রশীদ মোল্লার পুত্র।

স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার নিরীহ এক মোটরসাইকেল চালককে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়ার জের ধরে তাকে নির্জন এক মাছের ঘেরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায় সন্ত্রাসীরা। লোহার রোড দিয়ে পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি রড পুড়িয়ে তার শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দেয় সন্ত্রাসীরা। এসময় বিবস্ত্র করে তার ছবিও তোলে তারা।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সজল মোল্লার সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর জুলাই মাসে স্থানীয় সোমবারিয়া বাজারে শহিদুল মাল নামের ভাড়ায়চালিত এক মোটরসাইকেল চালককে নির্মম নির্যাতন করছিল সন্ত্রাসীরা। কেউ যখন তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি তখন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণের চিৎকার ও আর্তনাদ শুনে সজল মোল্লা তাকে উদ্ধারের জন্য সেখানে যান। সন্ত্রাসীদের তোপের মুখে তিনি নিজেও নির্যাতনের শিকার হনা। তারপরেও ওই তরুণকে উদ্ধার করেন তিনি।

এ ঘটনার জের ধরে গত ২ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরার পথে আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঝালেরতবক এলাকায় সজল মোল্লার মোটরসাইকেল থামিয়ে তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে চোখে আঘাত করে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এরপর নির্জন একটি মাছের ঘেরে আটকে রেখে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। এসময় দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। অন্যথায় তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। পাশবিক নির্যাতনের পর অর্ধমৃত অবস্থায় তাকে ফেলে রাখা হয়।

এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার সজল মোল্লা জানান, তিনি তার ফুফাতো ভাই সেলিম তালুকদারের সহযোগিতায় প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে কিছু দিন চিকিৎসা নেন। এরপর আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা চালাতে না পেরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসেন। এখনও তিনি শারীরিকভাবে চরম অসুস্থতা ও যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করছেন। কীভাবে তার পরবর্তী চিকিৎসা হবে তা তিনি জানেন না।

সজল মোল্লা আরো বলেন, এক সময় বাংলাদেশ সেনাবাহীনির সদস্য ছিলেন তিনি। পরে বাবা-মায়ের অসুস্থতাসহ পারিবারিক সমস্যার কারণে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন। এরপর থেকে আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হয়ে ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে একজন সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল রশীদ মোল্লা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। প্রায় ২৬ বছর ধরে তার পিতা স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচিত ইউপি সদস্যও ছিলেন।

এ ঘটনায় আমতলী থানায় আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আবুল কালাম আজাদ ওরফে নয়া তালুকদার (৩০), মাসুম তালুকদার (২২) ও আবুল বাসার আকনসহ (৩৫) নয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা (মামলা নং-১/১৬৪) দায়ের করেন ভুক্তভোগী সজল মোল্লা।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আমতলী থানার এসআই মোঃ শাহাবুল জানান, এ ঘটনায় মাসুম তালুকদার ও মাসুদরানা নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার ও ভুক্তভোগী সজল মোল্লার ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আমতলী থানার পুলিশ।