মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব-প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকায় হঠাৎ কয়েকটি বাসে কারা আগুন দিয়েছে সেগুলোর অডিও রেকর্ড ও ছবিসহ সব তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।
বিএনপি বলছে, সরকারি এজেন্ট না কি বাসে আগুন দিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আছি, নিজেরা আগুন দিয়ে কেন বদনাম নেব? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া তো আমাদের দায়িত্ব। বাসে আগুন দেওয়ার সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে আমাদের কাছে। ছবিও আছে। একেবারে পরিষ্কার। সুযোগ থাকলে সেগুলো দেখাতাম।
বিএনপির মিছিল চলে যাওয়ার পর গ্যাসলাইট দিয়ে কয়েক জন বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিএনপি নিজেরা আগুন দিয়ে সংসদে এসে সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে, যেটিকে বলে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে গতকাল সোমবার সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হারুনের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠক মুলতবি করার কথা বলছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বলেন, বাসে কারা আগুন দিয়েছে সব রেকর্ড রয়েছে। সেটা আমি এখানে শুনাব। টেকনোলজি অনেক এগিয়ে গেছে। টেকনোলজি কথা বলবে। এর পর প্রধানমন্ত্রী নিজের মোবাইল ফোনে থাকা একটি অডিও রেকর্ড বাজিয়ে শোনান। তাতে একজনকে বলতে শোনা যায়, “গাড়ি পোড়ায়ে ফেলছে..। অপরদিক থেকে নেতা গোছের কাউকে জানতে চাইতে শোনা যায়, কোথায় পোড়াইছে। এর পর নেতা জানতে চান, কয়টা গাড়ি পোড়াইছে। বলা হয় একটা। খবরদাতা ঐ নেতাকে বলেন, পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক সব আইছে। শনি বা রবিবার আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব, কথা ছিল, আসতে হবে। নেতা বললেন, ঠিক আছে।” প্রধানমন্ত্রী এই অডিও রেকর্ড বাজানোর পর উপস্থিত সরকারদলীয় সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, বিএনপির এমপি হারুনকে আমরা সংসদে প্রথম সারিতে বসিয়েছি। মাঝে মধ্যে তিনি এমন সব কথা এখানে তোলেন—আমরা সব উত্তর দিই না। তথ্য জেনে তার এখানে কথা বলা উচিত ছিল। হারুন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন—বিএনপি কী আদৌ নির্বাচন করে? নির্বাচনের নামে তারা একটা নাটক করে। নির্বাচনে গিয়ে কোনো প্রচার চালায় না, এজেন্ট দেয় না, ভোটের দিন কোনো কাজ করে না, হঠাত্ বলবে, নির্বাচন ঠিক হয়নি। প্রতিটা উপনির্বাচনেই তারা এরকম করবে, আর বলবে নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না। এবার ঢাকায় দুটো উপনির্বাচন হলো, সেখানে একই ঘটনা দেখলাম।
যখন মানুষের ভোট তারা পাচ্ছে না, তখন তারা এসবই করছে। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি করতে হয় তারা যেন ঠিকভাবে করেন। আমরা রাজনীতি করি, মানুষ চিনি। ঈশ্বরদীতে এমন একজনকে তারা প্রার্থী করল যাতে এক পয়সাও খরচ না হয়। টাকা-পয়সা যা পায় সব নিজেরা পকেটে রেখে দেয়। আর ভোটের মাঝখানে এসে সরে গিয়ে বলবে, ভোট ঠিক হয়নি। আসলে জনগণ তাদের অনেক আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। এরপর নানা অপকর্মের কারণে তারা জনগণ থেকে আরো দূরে সরে গেছে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অর্থ পাচার, নারী নির্যাতন—এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। হাজার হাজার মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। অগ্নিসংযোগ করে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। এটাই তো তাদের আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে বিএনপির গোড়ায় গলদ। জিয়া ক্ষমতায় এসেছে খুনের মাধ্যমে। যে দলের জন্ম খুনখারাবি আর সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে ভালো রাজনীতি মানুষ পাবে কীভাবে! অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি— এ সব তারা করে গেছে।
তিনি বলেন, তাদের (বিএনপির) দলের নেতা খুনের মামলার আসামি। তারা কাকে নেতা বানাল? যে গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, অর্থ পাচারের মামলায় যে দণ্ডিত, যে দেশ থেকে পলাতক—এমন একজনকে তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করল। বিএনপির সারাদেশে কী এমন একজন নেতাও নাই যাকে নেতা বানানো যায়? একজন ফেরারি আসামিকে নেতা বানাল! তাদের নেত্রী এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, তার পরেও তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, অপরাধের মাধ্যমে যাদের জন্ম তাদের বলব—এভাবে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভালো। মানুষ এসব বিশ্বাস করবে না। আমি তাদের বলব— তারা যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করে। তিনি বলেন, এই করোনার মধ্যেও আমরা অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছি। আর এই দুঃসময়কে কাজে লাগিয়ে তারা সরকারের বদনাম করতে চাচ্ছে। আর নিজেরা একটা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। কিন্তু টেকনোলজির কারণে অনেক কিছুই ধরা পড়ে যাচ্ছে। বাসে আগুন দেওয়ার এরকম অডিও আরো আছে।
এর আগে বিএনপির হারুন তার বক্তব্যে বলেন, বাসে আগুনের ঘটনায় বিএনপির যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের কয়েক জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায়-হাসপাতালে ছিলেন। অথচ তাদের আসামি করা হয়েছে। এটা অন্যায়, জুলুম। একটি সংসদীয় কমিটি গঠনের জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি কমিটিতে যাকে খুশি রাখেন। এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা জাতি জানতে চায়।