হুমকীর মুখে শত শত পরিবার
বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারা নদী থেকে নিয়ম অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

Published: 30 November 2020

এ টি এম তুরাব : নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মধ্যে পড়েছে নদী রক্ষা বাঁধ, আবাদি জমি। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হারাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে গতিপথ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীপাড়ের হাজারো মানুষ।ইতোমধ্যে ভাঙনের কবলে পড়েছ ঠাকুর বাড়ি, শ্মান-মন্দিরসহ ওই এলাকার রাস্তা-ঘাট, স্কুল, বসতবাড়ি, মসজিদ, কবরস্থানসহ ফসলি জমি বিলীন হয়েছে।

এদিকে, গত সোমবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে স্থানীয় দুবাগ বাজার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন নদীর তীরবর্তী দুই গ্রামবাসী।

ইজারার নীতিমালা অনুযায়ী, ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তত ২০টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাউবো’র অধীনে ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প বাস্তবায়নের জায়গায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালামের সহযোগীতায় নদীর কিনার থেকে বালু বিক্রি করছেন বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, কানাঘাট, বড়লেখাসহ বিভাগীয় শহর সিলেটের বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, নদীর গভীর তলদেশ থেকে বোরিং করে পাইপের সাহায্যে বালু তোলায় নদীর পাড়ে ভাঙন, চরের জমি নদীতে বিলীন হওয়া এবং মাছের বিচরণেও ক্ষতি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বালুসন্ত্রাসীরা এই আদেশ উপেক্ষা করে ভেঙে বিয়ানীবাজারের দুবাগ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এ কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম রক্ষা বাঁধ। এজন্য ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নয়া দুবাগ ও চরিয়া গ্রামের হাজারো মানুষ।

জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার কুশিয়ারা নদী সীমান্তবর্তী দুবাগ ইউনিয়নে নয়া দুবাগ গ্রামে বালুমহালের অবস্থান। এ মহাল থেকে কুদাল ও টুকরী (ঝাঁকা) দিয়ে বালু উত্তোলনের করিবেন মর্মে মহালটি ইজারাদার নেন নিপু। কাগজপত্রে ইজারাদার হিসেবে তার নাম থাকলেও মহালটি নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালামসহ আরো কয়েকজন।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুশিয়ারা নদীর দুবাগ বাজার এলাকা থেকে একেবারে সীমান্তের গজুকাটা গ্রাম পর্যন্ত হাইড্রোলিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত বালু উত্তোলন চলছে। বেশির ভাগ নৌকার সঙ্গে একটি করে ড্রেজার রয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে নদীর ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

নয়া দুবাগ গ্রামের মানুষ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, লিখে কি করবেন? কিছু করতে পারবেন? অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করার জন্য আমরা বহুত দৌড়াদৌড়ি করেছি, অনেক দরখাস্ত দিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুই হয়নি। সরকারী লোকজন আসলেও তাদের হাতেনাতে ধরতে পারে না। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা আগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি’র ৮নাম্বার ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার (সদস্য) বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেশিনের বিকট শব্দে বাড়িতে ঠিকমতো থাকতে পারি না, রাতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। তিনি বলেন, আমার ফসলি জমি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে। এখন শেষ সম্বল বসতভিটেটিও নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। আমি পরিষদের সদস্য, আমার চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালেও তিনি সহযোগিতা না করে বালুসন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে অবৈধ কাজে সহায়তা করছেন।

 

এ ব্যাপারে দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালাম বলেন, নদীতে একসময় ড্রেজার ছিলো। এখন নেই। সরকারী নির্দেশনা মেনেই নদী থেকে বালু তোলা হয়। প্রশাসন থেকে বলার পর আমরা ব্যবসায়ীকে বলে দিয়েছি, বোমা মেশিন বা ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা যাবে না।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব বলেন, নদীর চিহ্নিত বালুমহাল থেকে ইজারদাররা বালু উত্তোলন করছেন। তাদের ঝাঁকা-কোদাল দিয়ে বালু অনুমতি দেয়া হয়েছে, ড্রেজার দিয়ে নয়। যদি তারা নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলন করেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন বলে ইউএনও জানান।

অভিযোগ রয়েছে বালু খেকোচক্রটি দীর্ঘ দিন থেকে প্রশাসনকে বড় অংকের টাকায় ম্যানেজ করেই কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ছে।