মনঃকষ্টে রাণী এলিজাবেথ
পোস্ট ডেস্ক : বড়দিনকে সামনে রেখে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেশ মনঃকষ্টে আছেন।
তাঁর অতিপ্রিয় ও বিশ্বস্ত একটি কুকুর কিছুদিন আগে মারা গেছে। রাণী কুকুরগুলোকে বেশ আদরে আহ্লাদে বড় করেছেন। তাদের খাবার ও দেখভাল করতে কোন রকম কমতি যাতে না হয়, রাজকর্মচারীদের প্রতি সেটা সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ রয়েছে। পোষা কুকুরদের রাজপরিবারের সদস্যের মতোই দেখেন তিনি। মূল্যবান খাবার ও ওষুধ পরিবেশন করা হয়। রয়েছে স্টেক, খরগোশ রোস্ট ও চিকেনসহ হরেক রকম সমৃদ্ধ খাবারের মেনু। আদরের কুকুরদের মাঝে মধ্যে নিজে হাতেও খাবার পরিবেশন করে থাকেন রাণী এলিজাবেথ।
এই কুকুরগুলো রানীর জন্য স্মৃতিময়ও বটে।
১৮তম জন্মদিনে ক‘টি কুকুর ছানা উপহার দেন তাঁর বাবা চতুর্থ জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ। যেগুলো অল্পদিনে তাঁর প্রিয় ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে পরিনত হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো কুকুর তিনি পোষেছেন। এরমধ্যে সর্বশেষ চারটি কুকুর বাকিংহাম প্রাসাদ বা উইন্ডসর ক্যাসেলে রাণীর নিত্যসঙ্গী। এই কুকুরদের নাকি রাজভোগ দেয়া হয় রুপার থালায়। গত ১৩ বছর ধরে বিশ্বস্ত পোষ্য কুকুর ভুলকান দর্জির মৃত্যু রাণীর জন্য হৃদয় বিদারক হয়ে উঠেছে। বড়দিনের ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে এই কুকুরের প্রয়াণে তিনি খুবই শোকাহত বলে জানা গেছে।
কুকুর একটি প্রভুভক্ত প্রাণী। সাধারণত তারা নিজের চাইতেও মনিবকে বেশি ভালবাসে। ব্যক্তি বা সম্পত্তি পাহারা দেয়ার ক্ষেত্রে কুকুরের সুখ্যাতি সর্বত্র। যেকোনো বিপদ-আপদে কুকুর তার মনিবের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাদক সন্ধান থেকে শুরু করে বোমা ও বিস্ফোরক খুঁজে বের করতে আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের জুড়ি মেলা ভার।
অতীতে শিকারের লক্ষ্যে, ফসল হেফাজতের উদ্দেশ্যে, ঘরবাড়ি পাহারাদারির জন্য, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির সংরক্ষণে কুকুরের ব্যবহার ছিল। পরবর্তীতে দোকান ও অফিস পাহারা, অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন বেড়েছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে সেনাবাহিনীতে কুকুরের ব্যবহার শুরু হয়েছে। স্নাইপারের সাথে থেকে তার নিরাপত্তা দেয় স্কাউট ডগ। তথ্য বহনে ব্যবহৃত হয় ম্যাসেঞ্জার কুকুর। যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বসানো মাইন চিহ্নিত করতে সহায়তা করে মাইনিং ডগ। পুলিশের কাজে ও যুদ্ধক্ষেত্রে জার্মান শেফার্ড সঙ্গী হিসাবে বেশ সুখ্যাত। দেখতে সামান্য তফাত মনে হলেও বেলজিয়ান মালিনোয়া এসব কাজে শেফার্ডের মতই।
বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীর কাজে বক্সার ব্যবহার হয়ে আসছে। বার্তাবাহক, স্কাউট ও টহলদারি কাজে এরা সহায়ক। শক্তিশালী দেহ ও প্রখর বুদ্ধিমত্তার জন্য জনপ্রিয় ইউএস মেরিনের সঙ্গী ডোবারম্যান পিন্সার। প্রতিপক্ষের কন্ঠনালীতে কামড় দেয়ার কারণে ডোবারম্যানকে আমেরিকান ডেভিল ডগ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হারানো পাইলটদের খুঁজতে আলাস্কান মালামুট প্রজাতির কুকুর ব্যবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশের কুকুর হিসেবে এরা কঠিন বরফের মাঝেও কাজ করতে পারে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দেহ থেকে বিশেষ এক ধরনের গন্ধ বের হয় যেটি জার্মান শেপার্ড বা বিগল্ জাতের কুকুর সহজেই শনাক্ত করতে পারে বলে জানা গেছে। জার্মানিতেও কুকুরকে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করণের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনগ্রেট ক্র্যাম্প-ক্যারেনবাউর দেশটির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেনা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। সেখানে এই প্রশিক্ষণ শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগবে বলে জানানো হয়েছে। ফ্রান্সও কুকুরকে ঘ্রাণ নেয়ার মাধ্যমে কোরোনা শনাক্ত করণের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘ্রাণ নিলেই কুকুর বুঝতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। নামিবিয়ায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকার পটভূমিতে ইউনিভার্সিটি অফ নামিবিয়া বা ইউনাম-এর পশু-চিকিৎসা বিভাগ কুকুর ব্যবহার করে করোনা রোগী খুঁজে বের করার এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ২০টি ঘোড়া ও ১০টি কুকুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উপহার দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে এসব ঘোড়া ও কুকুর বাংলাদেশে আনা হয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের ১৭ পদাতিক ডিভিশনের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল এন এস খুরুর, বাংলাদেশ ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল হুমায়ুন কবিরের কাছে নো-ম্যান্সল্যান্ডে এসব ঘোড়া ও কুকুরগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
তবে বিশ্বস্ত কুকুরের মৃত্যুতে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ-এর এমন ভাবে গভীর শোকাহতের খবর ডেইলি মেইল সহ মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে আজ বেশ গুরুত্বের সাথে স্থান পেয়েছে।