ইংরেজি ২০২১ নববর্ষ উপলক্ষ্যে মান্যবর হাইকমিশনারের শুভেচ্ছা বাণী
“ইংরেজি নববর্ষ ২০২১-এর শুভ সূচনালগ্নে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড বসবাসকারী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী-ব্রিটিশ ভাই-বোনদের বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন।
গত ২০২০ ছিল মানব জাতির জন্য একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বছর। তবু বাংলাদেশের জন্য ছিল খুবই গৌরবের এবং সাফল্যের বছর। ২০২০ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন যথাযথ মর্যাদায় পালন করেছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কমিউনিটির ব্যক্তিবর্গ, ব্রিটিশ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতাকে জানাতে পেরেছি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদ্যাপনের সময়সীমা বাড়িয়েছেন। তাই আশা করি, নতুন বছরেও সবাইকে নিয়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযথভাবে উদ্যাপন করতে পারবো।
বিগত একশ’ বছরের মধ্যে ২০২০ ছিলো মানব জাতির জীবিকা ও জীবনের জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের বছর। এ বছর যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে কোভিড মহামারীতে যে সব প্রবাসী ভাই-বোনেরা মারা গেছেন তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনের প্রতি হাই কমিশনের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। একই সাথে ফ্রন্ট-লাইনে থেকে যে সব ডাক্তার, নার্স ও কেয়ার-গিভার কোভিড মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সেবা দিয়েছেন তাঁদের জানাই গভীর কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশী কমিউনিটির যে সব ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এই দু:সময়ে আন্তরিকতার সঙ্গে একে অন্যকে সহযোগিতা করেছেন এবং সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন তাঁদের সেই সাহসিকতাকে সাধুবাদ জানাই।
২০২০-এর এ কঠিন বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃপ্ত নেতৃত্বে বাংলাদেশ দূর্বার গতিতে এগিয়ে গেছে। আমরা কোভিড মহামারীর সময়েও এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৫.২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। যা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সর্বকালের সর্বোচ্চ ১৪.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৩১টি প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে। করোনায় মহামারী মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ ব্লুমবার্গ কোভিড রেজিলিয়েন্স সূচকে প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃতের হার ছিল সবচেয়ে কম। একই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০২০ সালে বাংলাদেশ অনেকগুলি রেকর্ড অর্জন করেছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মাথাপিছু গড় আয় ২,০২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভের ক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশী-ব্রিটিশরা চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন যা ছিলো একটি রেকর্ড। এজন্য প্রবাসী ভাই-বোনদেরও জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ হাই কমিশন কোভিড মহামারীর সময়েও যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড প্রবাসীদের ২৯ হাজার বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়েছে। লক-ডাউনের মধ্যেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাই কমিশনে এবং অনলাইনে ও ২৪-ঘন্টা মোবাইল হেল্পলাইনে আমরা সব ধরনের সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছি। এ জন্য কোভিড মহামারীর মধ্যেও গত বছরের তুলনায় হাই কমিশনের সেবার সংখ্যা ও মান কমেনি। ‘জরুরি কভিড হেল্প-লাইন’ চালু করে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে ও মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঐকান্তিক সহযোগিতায় হাই কমিশন দুটি বিশেষ প্রত্যাবর্তন ফ্লাইটের মাধ্যমে লক-ডাউনের সময় যুক্তরাজ্যে আটকেপড়া প্রায় ৩০০ বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরনে লন্ডন-সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে কোভিডের ভ্যাকসিন নেয়ার ক্ষেত্রেও হাই কমিশন কাজ করছে এবং আশা করা হচ্ছে জানুয়ারি মাসে এক কোটি ভ্যাকসিন এবং জুন মাসের মধ্যে ছয় কোটি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে।
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে ২০২১ সালেও বাংলাদেশ হাই কমিশন সবসময় প্রবাসী ভাই-বোনদের পাশে থাকবে। ২০২১ সালও আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গৌরবের বছর। এ বছর আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাজ্যের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন-এর নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পঞ্চাশ বছর উদ্যাপন করবো।
২০২১ সাল যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের জন্য অনাবিল শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ বয়ে আনুক। শুভ নববর্ষ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক!”