রানী ভিক্টোরিয়ার সাম্রাজ্য ১
একটি টিউডার স্বপ্ন ও প্রথম ব্রিটিশ উপনিবেশন

Published: 10 January 2021

।। হিস্ট্রি এক্সট্রা ।।

রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে তার শক্তি, প্রভাব এবং ধর্ম বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। বিবিসির হিস্ট্রি এক্সট্রার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। প্রতিবেদনটি ৩ পর্বে বিভক্ত করে তুলে ধরা হ’ল। ১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দখলে নেয়া কিছু ছন্নছাড়া উপনিবেশের একটি দেশ ছিল। প্রায় ৬৪ বছর পর তার মৃত্যুকালীন সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পরিণত হয়েছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তির সুসংহত এবং প্রভাবশালী পরাশক্তিতে। এবং রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রানী ভিক্টোরিয়া বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ শাসন করেছিলেন।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশ ইউনিয়নের পতাকাটি মানচিত্রের ঠিক উপরে উত্তর আমেরিকার সূদুরতম প্রান্ত থেকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল জুড়ে, পুরো আফ্রিকা মহাদেশে, ভারত উপমহাদেশ জুড়ে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দূরবর্তী অঞ্চলেও উত্তোলিত ছিল। ব্রিটেনের প্রভাব, শক্তি এবং নিয়ন্ত্রণ এত সুদূরপ্রসারী এবং বিশ্বজুড়ে এতটাই পরিব্যপ্ত ছিল যে, বলা হত, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্য কখনও অস্ত যায় না। এবং এটি সত্য ছিল। ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সারা রিচার্ডসন বলেছেন, ‘১৮ শতকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকাকে হারিয়ে ফেলা ছিল ব্রিটেনের আত্মবিশ্বাসের ওপর এক বিশাল আঘাত।’ ভিক্টোরিয়ার অধিগ্রহণের সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল অস্তিতিশীল অবস্থায়। তবে উনিশ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্বীকৃতির বাইরেও সম্প্রসারিত হয়েছিল এবং বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ মূল্যবোধকে ছড়িয়ে দেওয়ার নৈতিক লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল দেশটির উপনিবেশন।

শিল্প বিপ্লবের রেশে চালিত ব্রিটেন তার পণ্যগুলির জন্য নতুন বাজার তৈরি করতে এবং বিশ্বের অন্য স্থান থেকে কাঁচামাল সহজে সংগ্রহ করা নিশ্চিত করতে উৎসুক ছিল। সেকারণে ব্রিটেনের শিল্পগুলির সম্প্রসারণ এবং তার অর্থনীতিতে এর ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব দেশটির সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এর ফলাফল ছিল ব্যবসা, রাজনীতি এবং প্রশাসনের জটিল জট, যেখানে পণ্য এবং মানুষ সবই সবদিকে দিকে পরিচালিত হচ্ছিল। ব্রিটেনের কাঁচামাল এবং সস্তা শ্রমের প্রয়োজন ছিল; বিনিময়ে, দেশটি তার উপনিবেশগুলিতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি (যেমন রেলওয়ে) এবং চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো সামাজিক উন্নয়নের প্রস্তাব দেয়। যদিও পরবর্তীকালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা একটি নির্দিষ্ট জীবনযাত্রা এবং নির্মমতা নিয়ে আসে।

উনিশ শতকে ব্রিটেনের সাম্রাজ্য বিস্তারের সময় অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তির তুলনামূলক দুর্বলতাগুলি দেশটিকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করেছিল। নেপোলিয়োনিক যুদ্ধে (১৮০৩-১৫) ফ্রান্সকে পরাজিত করার পর ব্রিটেন সামরিক এবং অর্থনৈতিক উভয় শক্তির ক্ষেত্রে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। পরবর্তী ১ শ’ বছর ধরে দেশটি অন্যান্য বড় শক্তিগুলির কাছ থেকে সামান্যই সামরিক সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছে। ১৮১৫ থেকে ১৯১৪ এর মধ্যকার সময়টিকে প্যাক্স ব্রিটানিকা হিসাবে অভিহিত করা হত, যার ল্যাটিন অর্থ ‹ব্রিটিশ শান্তি›।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ধারণাটি ১৯ শতকীয় ছিল না। ১৫ শতকের শেষদিকে হাউস অফ টিউডার বা টিউডার রাজবংশের শাসনামলের প্রথম দিকে এই চিন্তভাবনার সূত্রপাত ঘটে, যখন রাজা সপ্তম হেনরি সমুদ্রপথে ভারতে পৌঁছানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় সন্ধানের জন্য পরিব্রাজকদের নিয়োজিত করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ইতালীর জন ক্যাবোট অপ্রত্যাশিতভাবে ১৪৯৭ সালে উত্তর আমেরিকায় অবতরণ করেন, সম্ভবত তিনি নিউফাউন্ডল্যান্ড, ল্যাব্রাডর বা কেপ ব্রেটন দ্বীপের সমুদ্র তীরে অবতরণ করেছিলেন।

এর মধ্যে সপ্তম হেনরির পৌত্রী প্রথম এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহন করেন এবং সেসময়ে ইংরেজ পররাষ্ট্রনীতি সম্প্রসারণের চেয়ে মূলত প্রতিরক্ষার ভিত্তিক ছিল। তা সত্তে¡ও, ১৫৮৪ সালে উত্তর আমেরিকাতে একটি বসতি স্থাপনের জন্য ওয়াল্টার রালেইকে একটি রাজকীয় সনদ প্রদান করা হয়েছিল। পরের বছর ভার্জিনিয়ার রোয়ানোকে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য একটি দল পাঠানো হয়। ইংরেজ উপনিবেশনের এটিই সর্বপ্রথম প্রচেষ্টা ছিল যা পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। (চলবে)