সুচির পক্ষে কথা বলায় ব্রিটেনে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূতকে দেশে তলব

Published: 10 March 2021

পোস্ট ডেস্ক : অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচির পক্ষে কথা বলার কারণে ব্রিটেনে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কাইওয়া জওয়ার মিন’কে দেশে তলব করা হয়েছে।

তিনি অং সান সুচির মুক্তি দাবি করেছেন। তলব করা হলেও তিনি দেশে ফিরবেন কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে বিবিসিকে বলেছেন, অভ্যুত্থানের কারণে এরই মধ্যে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে মিয়ানমার একটি গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। রাষ্ট্রদূত কাইওয়া জওয়ার মিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কর্নেল। তিনি সোমবার একটি বিবৃতি ইস্যু করেছেন। তাতে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সুচি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টের মুক্তি দাবি করেছেন।
তার এমন ভূমিকার জন্য প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব। তিনি বলেছেন, ওই রাষ্ট্রদূত সাহস ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন। বিবিসি বার্মিজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত কাইওয়া জওয়ার মিন বলেন, দেশে বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া দেখে তিনি এমন বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি দেখতে চাই না মিয়ানমারের মানুষ মারা যাচ্ছে। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এটা বন্ধ করতে। আমি শান্তি চাই। তিনি এ সময় অং সান সুচির মুক্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। দৃশ্যত সুচির পাশে থাকার অবস্থান নিয়ে নিয়েছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, মিস সুচি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি তার নির্দেশ মেনে চলব। তার এবং প্রেসিডেন্ড ইউ ইউন মিন্টের মুক্তি দাবি করছি। মিয়ানমার সমস্যার সমাধান নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনের কাছে নেই। এর সমাধান রয়েছে মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে। তিনি আরো দাবি করেন, তার সর্বশেষ এই অবস্থান দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয়। তিনি মধ্যপন্থি।
২০১৩ সাল থেকে লন্ডনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন কাইওয়া জওয়ার মিন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার পরাজয় মেনে নিয়ে ব্রিটেনে আশ্রয় চাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরো জানান, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্রিটেনে অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাসের কোনো সরাসরি যোগাযোগ নেই। ওদিকে মিয়ানমার সরকার তাকে দেশে তলব করে বিবৃতি দিয়েছে। তবে তিনি দেশে ফিরবেন কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। উল্লেখ্য, এর আগে গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূতাবাস থেকে বেসামরিক মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। একই বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম পালনের আহ্বান জানানো হয়।
৮ই নভেম্বর মিয়ানমারে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি মোট আসনের শতকরা ৮৩ ভাগেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু সেনাবাহিনী সেই ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রমাণ ছাড়া তারা দাবি করতে থাকে নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে। এ কারণে ১লা ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে অং সান সুচিকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাকে ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে। এক বছরের জন্য জারি করে জরুরি অবস্থা। এর কয়েকদিনের মাথায় শুরু হয় গণঅসহযোগ আন্দোলন। এর সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কাজে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন পেশাদাররা। এই বিক্ষোভ দ্রুততার সঙ্গে আরো গতি পেতে শুরু করে। আস্তে আস্তে বিক্ষোভে লাখো মানুষের জমায়েত হতে থাকে। কয়েক দিনে সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেসামরিক বাহিনীর সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। এতে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে।