লাল সন্ত্রাস বই থেকে
সিরাজ সিকদার যে কারণে কাজের মেয়েকে বিয়ে করেন
পোস্ট ডেস্ক : সিরাজ সিকদারের জন্ম ১৯৪৪ সালে, শরীয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জ উপজেলার লাকার্তা গ্রামে।
শরীয়তপুর একসময় মাদারীপুরের অংশ ছিল। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কলেজে থাকা অবস্থায়ই তিনি ছাত্রসংগঠনের কাজে কিছুটা জড়িয়ে ছিলেন। হয়েছিলেন কলেজ ছাত্রসংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। একই সংসদে ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, যিনি পরে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন।
‘লাল সন্ত্রাস: সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বাতিঘর থেকে প্রকাশিত বইটিতে আরো লেখা হয়েছে, বুয়েটে পড়ার সময় সিরাজ সিকদার পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সংগঠক হন। ১৯৬৫ সালে সোভিয়েত ও চিনা লাইনে ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হলে তিনি চিনপন্থী অংশের সঙ্গে থাকেন।
ওই সময়ে তার মনোজগতে বড় রকমের বদল ঘটে। এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়, যার মাধ্যমে তার ব্যক্তিমানস ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে।
সিকদারের উপলব্ধি হয়, মধ্যবিত্তসুলভ সনাতন ধ্যানধারণার খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ‘আমি’ শব্দের অহংবোধ ছাড়তে হবে। জীবনে তিনি যত ছবি তুলেছিলেন, যেসব ছবি তার সংগ্রহে ছিল, সব পুড়িয়ে ফেললেন। গোগ্রাসে গিলতে থাকলেন মাও সে তুংয়ের রচনা। সমাজের নানা অংশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য তাকে পীড়িত করল।
সিকদার তখন পড়েন থার্ড ইয়ারে। ঈদের ছুটিতে গেছেন গ্রামের বাড়ি। তার মা ছিলেন সামন্ত পরিবারের মেয়ে। খুব দাপুটে। বাড়িতে অল্পবয়সী একটা কাজের মেয়ে। বয়স পনেরো-ষোলো হবে। নাম রওশন আরা। ওই গাঁয়েরই মেয়ে। আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। ঈদের দিন ভোরবেলা থেকে কাজ করছে মেয়েটি। দুপুর হয়ে গেছে। মেয়েটির কাজে বিরাম নেই। দেখে সিকদারের খারাপ লাগল। মাকে বললেন, মেয়েটাকে তুমি সারা দিন খাটাচ্ছ কেন? মা যে জবাব দিলেন সিকদারের তা পছন্দ হলো না।
দুপুরের পর মেয়েটি আর নেই। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু একইগ্রামে বাড়ি, সবাই ভাবল হয়তো বাড়িতে গেছে বা অন্য কারও বাড়িতে গিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তার ফিরতে এতো দেরি হচ্ছে কেন? সিকদারের মা বেশ বিরক্ত। তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন।
বিকেল গড়িয়ে যায়। সূর্য ডুবুডুবু। পশ্চিমের আকাশ লাল হয়ে গেছে। ঠিক এ সময়ে মেয়েটিকে নিয়ে হাজির হলেন সিকদার, ‘ মা, এই যে তোমার পুত্রবধূকে নিয়া আসছি। এখন তাকে ইচ্ছামতো খাটাও।’
সিকদার আসলে কী করেছেন? তিনি মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেছেন শহরে, কাজী অফিসে। সেখানে তাকে বিয়ে করেছেন। এখন সে আর কাজের মেয়ে নয়, বাড়ির বউ।
ঈদের ছুটি শেষ। রওশন আরাকে নিয়ে সিকদার চলে আসেন ঢাকায়। তিনি ছিলেন কায়েদে আজম হলের (এখন তিতুমীর হল) আবাসিক ছাত্র। আজিমপুরে একটা বাসা ভাড়া নিলেন তিনি। স্ত্রীকে সেখানে রাখলেন। তিনি থাকতেন হলে। মাঝেমধ্যে বাসায় এসে থাকতেন।
১৯৬৫ সালের ১০ জুন কায়েদে আজম হলের ছাত্রসংসদের নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে সিরাজ সিকদার সহসভাপতি হন। ২-৩ জুন ১৯৬৬ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম বিভাগ পেয়ে পাস করেন সিরাজ সিকদার। ছাত্রজীবন শেষ। শুরু আরেক জীবন।