ফুকুশিমার দূষিত পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা জাপানের

Published: 13 April 2021

পোস্ট ডেস্ক : ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুসিমা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের কমপক্ষে ১০ লাখ টন দূষিত পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করতে চায় জাপান।

এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে এর নিন্দা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, পরিবেশবাদী গ্রুপগুলো। ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে। কারণ, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের দূষিত পানি সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে তাতে মাছসহ সব জলজ প্রাণির জীবন বিপন্ন হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে আরো বলা হয়েছে এত বিপুল পরিমাণ পানি সমুদ্রে রিলিজ দিতে বা সমুদ্রে ছাড়া শুরু হবে প্রায় দু’বছরের মধ্যে। এ কথা জানিয়ে সরকার বলেছে, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে কয়েক দশক। ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনা করে টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি।
তারাই এই পানি অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত ফর্মুলেট করার পর সরকার বলেছে, সমস্ত নিয়মনীতি মেনে আমরা এই পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ফুকুশিমা থেকে যে ১০ লাখ টন পানি অবমুক্তকরণের কথা বলা হচ্ছে তার আয়তন অলিম্পিকের ৫০০ সুইমিং পুলের আয়তনের সমান। এই পানিকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়েছে। তবুও এ থেকে ক্ষতিকর আইসোটোপগুলোকে সরিয়ে ফেলতে আরো ফিল্টার করা প্রয়োজন। সমুদ্রে এই পানি অবমুক্ত করার আগে আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করে এই পানিকে আরো হাল্কা করার প্রয়োজনীয়তা আছে। এই দূষিত পানি বা ভারি পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করার জাপানের সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপানের এমন উদ্যোগকে চরমমাত্রায় দায়িত্বহীনের কাজ বলে মন্তব্য করেছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, এ বিষয়ে আরো পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার আছে চীনের। অন্যদিকে এমন কর্মসূচিকে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। তারা জানিয়েছে, এ বিষয়ে জাপানের বিরুদ্ধে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ উত্থাপন করবে।

সিউলে জাপান দূতাবাসের বাইরে বেশ কিছু মানুষ এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা একে পারমাণবিক সন্ত্রাস বলে অভিহিত করেছে। ওদিকে জাপানের এ সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিস জাপান। এর একজন কর্মী কাজু সুজুকি বলেছেন, ফুকুশিমার মানুষের কাছে আরো একবার ব্যর্থ হলো জাপান সরকার। তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যযুক্ত দূষিত পানি ইচ্ছাকৃত ও পুরো অন্যায়ভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান সরকার। দীর্ঘ সময় এই পানি সংরক্ষণ করে তা থেকে ক্ষতিকর পদার্থ, বিশেষ করে তেজষ্ক্রিয়তা সর্বনি¤œ মাত্রায় নামিয়ে আনার প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিবর্তে, জাপান সস্তা বিকল্প বেছে নিচ্ছে। সোমবার গ্রিনপিস জাপান বলেছে, তারা এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৪ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক জেনিফার মর্গান বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জাপানের যে বাধ্যবাধকতা আছে, এই পানি অবমুক্ত করার পরিকল্পনা তার লঙ্ঘন। এ সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে সামনের সময়গুলোতে।

উল্লেখ্য, এখন থেকে ১০ বছর আগে সুনামিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। এর ১০ বছর পরে ওই কেন্দ্রের দূষিত পানি অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। মৎস্যশিল্পের জন্য এটা আরেকটা বড় হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। মার্চে জাতিসংঘের ৫ জন স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর বলেছেন, সেখানকার দূষিত পানি এখনও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে তারা এই পানি সমুদ্রে অবমুক্ত করার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য সমাধান নয়। উল্লেখ্য, ওই পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের চুল্লিকে ঠা-া করার কাজে এই পানি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু ২০১১ সালে মার্চে সুনামির কারণে ওই স্থাপনার চুল্লিতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তখন থেকেই দূষিত ওই পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে এই স্থাপনার আশপাশে বিভিন্ন ট্যাংকে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস উল্লেখ করেছেন যে, আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব বিষয়ের ব্যবস্থাপনা করছে জাপান। তার ভাষায়, এই ব্যতিক্রমী এবং চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে জাপান যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা কার্যকর। তারা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ। বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য পারমাণবিক নিরাপত্তার মানদ- অনুসরণ করেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। উল্লেখ্য, ওই সুনামির পর ফুকুশিমা থেকে কয়েক লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এখনও ৪০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি তেজষ্ক্রিয় দূষণের কারণে। ওই বিদ্যুত কেন্দ্র ব্যবহার উপযোগী বা সেখান থেকে তেজষ্ক্রিয়তা পরিষ্কার করতে কয়েক দশক সময় লাগতে পারে।