‘মাহরাম’ ছাড়াই হজ পালন করলেন অনেক নারী

Published: 22 July 2021

পোস্ট ডেস্ক :


করোনাকালে অনুষ্ঠিত হজে মাহরাম বা পুরুষ অভিভাবক ছাড়াও নারীদের হজ পালনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। নতুন নিয়মে নারী সংঘের সদস্য হয়ে এবার অনেক নারী হজ পালন করেছেন।

গত ১৩ জুন করোনাকালে হজে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের আবেদন শুরুর কথা জানায় সৌদির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ সময় পুরুষ অভিবাবক ছাড়াও নারীরা হজ পালনের সুযোগ পাবেন বলে জানানো হয়। আগ্রহী নারীরা ‘উইম্যানস লিগ’-এর সদস্য হিসেবে হজ পালন করবেন।

আগে হজে অংশগ্রহণকারী ৪৫ বছরের কম বসয়ী নারীদের জন্য পুরুষ অভিভাবক থাকা শর্ত ছিল। এবার এ নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। তাছাড়া শিশুদেরও হজ পালনে বারণ করা হয়।

পাকিস্তানি নারীর শৈশবের স্বপ্ন পূরণ : ৩৫ বছর বয়সী পাকিস্তানি নারী বুশরা শাহ এবার মাহরাম ছাড়া হজ পালন করেছেন। শৈশব থেকেই তিনি মক্কায় এসে পবিত্র হজ পালনের আশা করেছিলেন। নতুন নিয়ম অনুসরণ করে তিনি ‘মাহরাম’ বা পুরুষ অভিবাবক ছাড়াই হজ পালন করেছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে হজে যাওয়ার প্রাক্কালে বুশরা জানিয়েছেন, ‘এবার আমার স্বপ্ন বাস্তব হতে চলেছে। শৈশব থেকে আমার হজ পালনের স্বপ্ন ছিল। আমার সঙ্গে অনেক নারীও এসেছেন। আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আমরা এখন স্বাধীন, আমাদের এখন অভিভাবকের প্রয়োজন নেই।’

অল্প বয়সী অনেক মায়েদের জন্য স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে হজ যাওয়া অনেক কষ্টদায়ক। পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে থাকায় হজের সময় ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া তাঁর জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

করোনাকালে শিশুদের হজ পালন নিষিদ্ধ করে সৌদি সরকার। ফলে বুশরার স্বামী আলি মুরতাদা তাঁর স্ত্রীকে হজ পালনে একাকী যেতে উৎসাহিত করেন। আর জেদ্দায় অবস্থান করে তিনি নিজে সন্তানদের দেখাশোনা করেন।

বুশরা জানান, ‘আমাদের চিন্তা ছিল যে আমাদের কোনো একজন এবার হজ পালন করবে। শিশুরা হয়ত হজে অংশগ্রহণের অনুমতি পাবে না। তাই আমি এবার হজ পালন করি।’

হজ পালন করলেন মিসরীয় নারী : মিসরীয় নারী হজযাত্রী মারওয়া সাকেরও এবার পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই হজ পালন করেছেন। একটি সামাজ উন্নয় সংস্থায় কর্মরত এ নারী সৌদির রাজধানী রিয়াদে বসবাস করেন। ‘অভিভাবক ছাড়া হজ পালন’কে তিনি বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে করেন।

তিন সন্তানের মা মারওয়া জানান, করোনা মহামারির আগে বেশ কয়েক বার তিনি হজ পালনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অল্প সময়ে ফের হজ করতে তাঁর স্বামী অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত। অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যেও মহান আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’

ব্রিটিশ চিকিৎসক নারীর হজ পালন : ব্রিটিশ-পাকিস্তানি চিকিৎসক সাদাফ গফুর পুরুষ অভিভাবক ছাড়া হজ পালন করতে এসেছেন। অবশ্য তাঁর জন্য একাকী আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তিন সন্তানের মা সাদাফ বলেন, ‘আমরা সন্তানদের একাকী ছেড়ে আসতে পারি না।’

সাদাফের স্বামী তাঁর সঙ্গে অনেক দূর পর্যন্ত এসেছেন। অতঃপর তিনি কিছু প্রতিবেশীর সঙ্গে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। ‘একাকী কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক কঠিন। তবে নতুন নিয়মকে আমরা নিজেদের জন্য পরম প্রাপ্তি হিসেবে গ্রহণ করেছি’ বলে তিনি জানান।