মাধ্যমিক এক অধ্যায়

Published: 23 July 2021
।। নীল সরকার ।।
আমাদের জীবন বিভিন্ন টুকরো পর্বে ভাগ করা। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক তেমন একটা শিক্ষার পর্ব।
মাধ্যমিকের ফল বের হয়েছে। গতবারের মতো এই বছরও পরীক্ষা বিহীন মূল্যায়ন। অনেকে গেল গেল রব তুলছেন। পেটে কিছু বিদ্যা না নিয়েই হাতে চলে এল গ্রহনযোগ্য শংসাপত্র। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করলেও কি সকলের জ্ঞান গজাত? এই জীবন নিয়ে মারণ রোগের সংকটে ভারতের মতো আংশিক অনলাইন পরিকাঠামোতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল না। পড়ুয়াদের মধ্যে বৈষম্য হত।
মাধ্যমিক পরীক্ষা জীবনে প্রথম রাজ্য স্তরের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে টেস্ট থেকেই চরম উত্তেজনা। টেস্টের রেজাল্ট স্কুলের নোটিশ বোর্ডে দেখতে সে কি ঠেলাঠেলি। আজও সেই উত্তেজনা চোখে ভাসে। যাদের নাম নেই তাদের মুখের দিকে তাকানো যেত না। ছলছল চোখে তারা ফিরে যেত। নেহাত পাড়ার না হলে বন্ধুত্বের গভীরতা কমে যেত। তার বাড়ির লোকেরা আক্ষেপ করতেন, বাবা বন্ধুকে একটু উৎসাহিত কর। তোমরা এক সঙ্গে থাক।
শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকত না।
হ্যাঁ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পর বেশ কিছু বন্ধুত্ব দূরে সরে যেত। সেই গোঁফ গজানোর সময়ে এমন ঘটনা মনে ছাপ ফেলত। মন খারাপ হত। অনেকে বান্ধবী হারিয়ে কবিতা লিখত। সে এক অস্থির ঝড়ের সময়। ফল ভাল হলে সিনেমা দেখতে যাওয়া। সেদিন অভিভাবকরা ধৃতরাষ্ট্র।
বৃহত্তর জগতের আকর্ষণ টানছে। দরজা খুলে যাচ্ছে সাবালক দুনিয়ার। এই সময়ে অভিভাবকের আঙুল ত্যাগ করে নিজের অস্তিত্ব গড়ে উঠার সময়। একটু ভুল হলেই হরকে যাবে জীবন। অথচ সচেতনতা নেই।
ছোটবেলায় সকলে বলে সাবালক হতে। কিন্ত হওয়াটা খুব কুসুম উত্তীর্ণ বলা যাবে না। ওই বয়সে অনেক কিছু করতে স্বপ্ন দেখে মন। কিন্ত অভিভাবকদের বাধা যেন চিনের প্রাচীর। বিশেষত প্রেম ছিল অধ:পতনের নিশ্চিত পথ। করলেই শেষ ক্যারিয়ার।  তবু ঐ বয়সে আগুপিছু না ভেবে বাড়ি থেকে পালাত বহুযুগল। তারপর থানা পুলিশ। প্রেমের শ্রাদ্ধ!
সেই পর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দুটো গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমরা সেই সময় দেখেছি, যখন বেকার ছেলেরা গেজেট আনত ভোরবেলা। ঘুম চোখে দৌড়াতাম একটাকা দিয়ে ভবিষ্যত জানতে। সেই গেজেট দেখানো লোকটাকে তখন ভগবান মনে হত। জানার আগে চরম উত্তেজনা।
পাশাপাশি ভিড়ে কেউ পাসের আনন্দে, কেউ ফেলের জন্য চোখের জল ফেলছে। জীবন বড্ড বৈচিত্রময়।
আজ আর সেই গেজেটের দিন নেই। গেজেট দেখার ভুলে বহুজনের প্রান গিয়েছে। পরিবার আত্মহত্যাতে রিক্ত। স্বজন হারার কান্না। ভাবতাম পরীক্ষার ফল কি জীবনের চরম প্রাপ্তি? সকলকে পাশ করতেই হবে? শরতবাবুর মেজদা তবে কারা হবে?
কান্না-হাসির সেই খেলা আজও চলছে। জীবন বদলে গিয়েছে। সব কিছুই অন লাইন। আজ সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ। পাশ করলে পাড়া-প্রতিবেশীদের মিষ্টি বিতরন, প্রণাম করে আশীর্বাদ নেওয়ার রেওয়াজ তামাদি হয়েছে। মনের কোনায় ধূসর ষ্মৃতি।