বার্মিংহামে আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ)’র ১ম বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত

Published: 28 July 2021

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :


আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুফতিয়ে আযম, উস্তাদুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, পীরে কামেল, হযরত আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব ক্বিবলাহ (রহ.)’র ১ম বার্ষিক ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে গত ১৯ জুলাই সোমবার বিকেলে যুক্তরাজ্যের অন্যতম শহর বার্মিংহামের ডারলিস্টন সুন্নি জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।

মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আমিন আলী। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মুহাম্মদ মুবাশ্শির আহমদ। আল্লামা দুবাগী ছাহেবের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন মসজিদের ইমাম ও খতিব অ্যাডভোকেট মাওলানা ছালেহ আহমদ মনছুরী, আলহাজ্ব আহমদ রশীদ, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মনোরাজ আলী, মাস্টার আনোয়ারুজ্জামান প্রমুখ ।

বক্তারা বলেন, দেশ ও জাতীর খেদমতের জন্য যে সব মনীষী আজীবন ত্যাগ তিতীক্ষা প্রদর্শন করে জাতীর সামনে উজ্জল নক্ষত্র হিসাবে প্রস্ফুটিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম পীরে কামিল, হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব (রহ.)। ইসলামের বিশ্বজনীন আদর্শ প্রচার ও প্রসারের জন্যে তিনি বিলাতে আগমন করেন। কর্মজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিলাতের লেষ্টার শহরে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। তাই তাঁকে “লেষ্টারের সাহেব” বলা হয়। তিনি ছিলেন সর্বজন স্বীকৃত কামেল ওলী।

হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) ছিলেন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্র ও আদর্শ ছিল আকর্ষণীয়। তাঁর এই ব্যক্তিত্বই তাঁকে অন্যের কাছে অনুকরণীয় করে তুলতো।

তিনি সকল সময় উন্মুখ হয়ে থাকতেন ইসলামের খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য। তিনি অপেক্ষা করতেন না বিশেষ আহবানের। তিনি প্রকৃত অর্থে ইসলাম প্রচারের কাজে নিরলস ভাবে আত্মনিয়োগ করেন। এই কাজের জন্য তিনি সমগ্র যুক্তরাজ্যে ছুটে রেড়িয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চল ও জনপদে, সকল স্থানেই গৃহিত হয়েছিলেন সমান ভাবে। এইসব এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও অর্জন করেছিলেন। সেই সাথে তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। তিনি যখন যেখানেই গেছেন, যাদের সাথে মিশেছেন সেখানেই ইসলামের সুমহান আদর্শকে উচ্চকিত করে তুলে ধরেছেন। তাঁর চরিত্রের এই সকল বিশেষ গুণ দেখে ভিন্নধর্মীরা ও মুগ্ধ হয়ে যেতো। তিনি কাউকে অহেতুক অশ্রদ্ধা ও অসম্মান করতেন না। এজন্যে তিনিও পেয়েছেন অঢল মর্যাদা।

তাঁর পরিশ্রম সার্থক হয়েছিল সার্বিক অর্থেই। ইসলাম প্রচারের পাশাপাশী আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) জনহিতকর ও জ্ঞান বিকাশের মাধ্যম হিসাবে বহুমুখী কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, খানেকা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা।

শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং বিচক্ষন। কুরআন হাদীস সহ ইসলামের সার্বিক জ্ঞান-লাভের জন্যে তাঁর আগ্রহের কোনো সীমা ছিল না। সমাজের অন্ধকার দুর করার জন্যে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন তাঁর ক্ষুরধার কলম। তিনি লিখেছেন অবিরাম। সাহিত্য-খ্যাতির জন্যে নয়, মানুষের কল্যানের জন্যে তিনি সর্বদা লিখে গেছেন। তিনি বাংলা ভাষায় যেমন লিখতেন, তেমনি লিখতেন আরবী ও উর্দু ভাষাতেও তিনি আজীবন শিক্ষা প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করে অমর হয়ে আছেন।

লেস্টার শহরে আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) বিশুদ্ধরূপে কোরআন তিলাওয়াত প্রশিক্ষণ শুরু করার পর এ প্রগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সহ পেশাজীবি, শ্রমজীবি, চাকুরীজীবি ও ব্যবসায়ী সবাই । এতে সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ গ্রহনে অবিস্মরনীয় জাগরণ লক্ষ করা যায়।

আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) দানশীলতার ক্ষেত্রেও ছিলেন বিরল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। বাংলাদেশে অনেক পরিবার হযরতের দানের উপরই জীবন চালিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের সন্তানাদির লেখা-পড়া বিবাহ- শাদী থেকে নিয়ে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনিই তাদের অভিভাবক হয়ে কার্য সমাধান করেছেন।

হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) একজন খাঁটি আশেকে রাসুল ছিলেন। রাসুল (সা.)’র ছোট থেকে ছোট সুন্নাত ও তিনি গুরুত্বের সাথে আমল করতেন এবং অন্যান্যদেরকে এর উপর আমল করতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.)’র ওইসব সুন্নত যেগুলো মানুষ অবহেলা বশত ছেড়ে দেওয়ায় তা আজ মৃতপ্রায় হয়ে গেছে, তিনি সে গুলো খুঁজে খুঁজে বের করে আমলে পরিণত করেন। দুবাগী ছাহেবের হৃদয়টা রাসুল প্রেমে ভর্তি ছিল। রাসুল (সা.)’র আলোচনা শুনলেই তিনি কেঁদে উঠতেন। মাঝে মধ্যে তো এমন হতো, তিনি লাগাতার রাসুল (সা.)’র জীবনের খন্ড অংশগুলো আলোচনা করতেন আর আওয়াজ করে কাঁদতেন।

মুনাযীরে আযম হযরত আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র বয়ানে ছিল সামঞ্জতা, ভাব গাম্ভীর্য, সাবলীলতা। একান্ত পাষানদিলও তাঁর মর্মস্পর্শী বয়ানে গলে যেত এবং উপকৃত হতেন সর্বস্তরের আলেম উলামা। সমালোচনা মুলক আলোচনা তিনি করতেন না। কিন্তু হক কথা বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না। হাসান বিন সাবিত (রাঃ), মাওলানা রূমী, আল্লামা ইকবাল, হাফেজ সিরাজী, কবি নজরুল প্রমুখদের কবিতা কখনো আশেকী আন্দাজে নকল করতেন।
আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) যেমন ছিলেন শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত তেমনী ছিলেন আমল-আখলাক তথা ব্যবহারিক জীবনেও মার্জিত। আমৃত্যু তিনি মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে গেছেন আর এজন্য তিনি আমাদের কাছে সুপরিচিত এবং বিখ্যাত হয়ে আছেন। আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) আজ আর নেই। তবুও বেঁচে আছে তাঁর জীবনের আলোচিত ইতিহাস। তিনি বেঁচে আছেন অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে। তাদের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার আবর্তে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।
পরিশেষে দোয়া পরিচালনা করেন বার্মিংহাম ডারলিস্টন সুন্নি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব অ্যাডভোকেট মাওলানা ছালেহ আহমদ মনছুরী।