বলুন, আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম
।। জাফর আহমাদ।।

“অমুক অমুক কারণে বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম” বা “এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম” এমনটি বলবেন না। বরং বলুন, আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম বা ‘আল্লাহ বাঁচিয়েছেন’, আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিকারার্থে আল্লাহই আপনাকে আমাকে বাঁচিয়েছেন। কারণ জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ তা’আলা। তিনিই মানুষকে মৃত্যু দেন তিনি মানুষকে জীবন দেন। তিনিই বান্দার পরিক্ষার জন্য বিপদ-মুসিবত দেন আবার তিনিই বিপদ-মুসিবত থেকে উদ্ধার করেন।
প্রচণ্ড ঝড় তুফান বা অন্যান্য আপদ বিপদে নিপতিত হলে আমরা বিভিন্ন কালামের মাধ্যমে আল্লাহকে ডেকে থাকি, কিন্তু বিপদ যখন কেটে যায় তখন আল্লাহকে ভুলে যাই। শুধুমাত্র ভুলেই যায় তা নয় অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করা হয়। বলা হয় অমুক অমুক কারণে আসন্ন বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে গেলাম বা বেঁচে গেলাম।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,“আর যখন (সমুদ্রে) একটি তরঙ্গ তাদেরকে ছেয়ে ফেলে ছাউনির মতো তখন তারা আল্লাহকে ডাকে নিজেদের আনুগত্যকে একদম তাঁর জন্য একান্ত করে নিয়ে। তারপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলদেশে পৌঁছে দেন তখন তাদের কেউ কেউ মাঝপথ বেছে নেয়। আর প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না।”(সুরা লুকমান:৩২)
আসলে বিশ্বাসঘাতক এমন এক ব্যক্তি যে মারাত্মক রকমের বেঈমানী করে এবং নিজের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পালন করে না। আর অকৃতজ্ঞ হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার প্রতি যতই অনুগ্রহ করা হোক না কেন সে তা কখনোই স্বীকার করে না এবং নিজের অনুগ্রহকারীর প্রতি আগ্রাসী আচরণ করে। এসব দোষ যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তারাই মূলত: বিপদ উত্তীর্ণ হবার পর নিসংকোচে ও নিলর্জ্জভাবে উপকারীর উপকার ভুলে যায় এবং অন্যদের তার সাথে শিরক করে। এই ধরণের অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি বড়ই বিপদজনক।
কঠিণ বিপদের সময় আল্লাহর নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে। বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার পর অমুক অমুক কারণে ও উপায়ে আমরা বেঁচে গেলাম। কোন মু’মিন কখনো এ ধরণের কথা বলতে পারে না। উল্লেখিত আয়াতটি নাযিল হয়েছে মুলত: নাস্তিক, মুশরিক ও কাফেরদের উদ্দেশ্য করে। তাদের অবস্থা হলো, ঝড়-তুফানের সময় আল্লাহর অস্তিত্বের কথা স্বতস্ফুর্তই তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এবং তখন তারা তাঁর শরণাপন্ন হয়। কিন্তু বিপদ যখন কেটে যায় তখন তা তারা মানতে চায় না। তারা তাদের এ আচরণের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে যে, এটা আমাদের একটা দূর্বলতা ছিল। কঠিণ বিপদের সময় অস্বাভাবিক অবস্থায় আমরা এ দূর্বলতার শিকার হয়ে ছিলাম। আসলে অমুক অমুক সাধুবাবা বা দেব-দেবীর ছায়া আমাদের মাথার ওপর ছিল। তাদের কল্যাণেই আমরা এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি।
আমাদের কারো কারো মধ্যেও এ ধরণের নাস্তিক, মুশরিক ও কাফেরদের আচরণ ভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়। আমাদের মধ্যে এ চিন্তার উদয়ই হয় না যে, যখন সবদিকের সব আশা-ভরসা-সহায় ছিন্ন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল তখন একমাত্র এক লা-শরীক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ছিল না এবং তারই শরণাপন্ন তারা হয়েছিল।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “মানুষের ওপর যখন কোন বিপদ আসে তখন সে তার রবের দিকে ফিরে যায় এবং তাঁকে ডাকে। কিন্তু যখন তার রব তাকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ইতিপূর্বে যে বিপদে পড়ে তাঁকে ডাকছিল তা ভুলে যায় এবং অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করতে থাকে।”(সুরা যুমার:৮)
আল্লাহ আরো বলেন,“মানুষের অবস্থা হচ্ছে. যখন সে কোন কঠিণ সময়ের মুখোমুখি হয়, তখন সে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় আমাকে ডাকে। কিন্তু যখন আমি তার বিপদ হটিয়ে দেই তখন এমনভাবে চলতে থাকে যেন সে কখনো নিজের কোন খারাপ সময়ে আমাকে ডাকেই-নি। ঠিক তেমনিভাবে সীমা অতিক্রমকারীদের জন্য তাদের কার্যক্রমকে সুশোভন করে দেয়া হয়েছে।”(সুরা ইউনুস:১২)
আমরা আমাদের গ্রামে দেখেছি যখন ঝড়-তুফান আসতো তখন শব্দ করে “লা ইলাহা ইল্লাহ’ যিকির করতো যখন ঝড়-তুফান চলে যেতো তখন বলতো আমার ঘরটা ভাঙ্গে নাই কারণ আমার ঘরের খুঁটিগুলো নতুন ও মজবুত ছিল। অমুকের ঘর পড়ে গেছে কারণ তার খুঁটিগুলো পুরাতন ও দুর্বল ছিল।
আমরা জানি, বিমান মাটি থেকে প্রায় ৩৬০০০ ফুট উপড় দিয়ে চলাচল করে, মনে করুন, মধ্যাকাশে হঠাৎ বিমানটি ঝড়ের কবলে পড়ে প্রচন্ডাকারে ঝাঁকুনী শুরু হলো। এমনটি হয়ও বটে। যাকে বিমানের বাম্পিং বলা হয়। বলুন, কি অসহায়ত্ব? এই অসহায়ত্ব থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর আল্লাহর নাম না বলে যদি বলেন ‘পাইলটের দক্ষতা ও চৌকস ব্যবস্থাপনায় এবারের মতো বেঁেচ গেলাম। তাহলে এ কথা নাস্তিক, মুশরিক ও কাফেরদের মতো হয়ে গেলো না? আপনার এই অসহায়ত্ব থেকে আল্লাহ তা’আলাই উদ্ধার করেছেন। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে রক্ষার নিমিত্তে পাইলটের মাথায় উদ্ধারের কৌশল ঢেলে দিয়েছেন। আলহামদুল্লিাহ বলুন। পাইলটের বুদ্ধিমত্তার জন্যও যাযাকাল্লাহ বলুন। তাহলে এটিই হবে আত্মসমর্পিত ইসলামী জীবন।
এই ধরণের আচরণ জুলুম বটে। জুুলুম গভীর অর্থবোধক শব্দ। সাধারণ অর্থে জুুলুম হলো: অন্যের অধিকারকে হরণ করা। যে ব্যক্তি কারো অধিকারকে হরণ করে জালেম। সকল প্রকার বিপদ থেকে আল্লাহই রক্ষা করেন। সুতরাং এই স্বীকৃতি আল্লাহর প্রাপ্য এটি আল্লাহর অধিকার। যখন আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সৃষ্টিকুলের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় তখন মুলত আল্লাহর অধিকারকে হরণ করা হয়। আপনারা জানেন যে, শিরক একটি বড় জুলুম। আল্লাহর অধিকারকে হরণ করে যখন কোন বান্দা অন্য কোন বান্দাকে স্বীকৃতি দেয় তখন তা শিরক হয় সাথে সাথে তা জুলুমও হয়।
সত্যিকার অর্থে যখন আপদ বিপদে আল্লাহ দেন আর আল্লাহই তা থেকে রক্ষা করেন। তখন আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলে সকলের স্বীকৃতি এমনিই হয়ে যায়। কারণ সকলেই আল্লাহর সৃষ্টি। সুতরাং শোকরিয়া একমাত্র আল্লাহর আদায় করুন। এবং সকলের জন্য দু’আ করুন।




