করিমগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী কাঁটাতারের বাহিরে মানিকপুরের জাগ্রত মন্দির

Published: 6 October 2021

অরুপ রায়, করিমগঞ্জ ৬ অক্টোবর :

মাত্রকয়েক কিলোমিটার আগে বরাক দু’ভাগে ভাগ হয়েছে একদিকে সুরমা একদিকে কুশিয়ারা আর এই কুশিয়ারা নদী গ্রাস চলে গেছে আস্ত একটা গ্রাম তবে গ্রাম চলে গেল মায়ের মন্দিরটি আজও সুরক্ষিত । মন্দির পাহারা দিচ্ছে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী । পূজা করছে গ্রামবাসী । ভক্তি নিস্টা নিয়ে মায়ের এই মন্দিরে কেউ যদি আসা  নিয়ে এলে মা কাউকে নিরাশা করেন না । অনেকে মনন্ত করে ফল পান পরে  ফিরে এসে মা কে প্রাণম জানান এমন অনেক নিদর্শন আছে।  এমন অনেক বাস্তব

ঘটনার সাক্ষী গ্রামের উভয় সম্প্রদায়ের নাগরিকরা । ভারত বাংলা সীমান্ত শহর করিমগঞ্জ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরবর্তী করিমগঞ্জ বাইপাস পয়েন্টের নিউ করিমগঞ্জের স্টেশনের বিপরীতে থাকা সড়কপথে ভারত বাংলা সীমান্ত কাঁটাতারে ঘেঁষা মানিকপুর গ্রাম । কাঁটাতারের বাইরে মা দুর্গা একটি মন্দির যার  অনেক কাহিনীর কথা শোনালেন গ্রামের গ্রূপ সদস্য অপু মালাকার । প্রায় দেড়শো   বছর আগে নরেন্দ্র মালাকারের পূর্বপুরুষদের তৈরি এই দুর্গা মন্দির । আজ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রতিদিন পূজার্চনা হচ্ছে । এক কালে বর্তমান কাঁটাতারের বাইরে নদীর অর্ধেক নিয়ে আস্ত একটি গ্রাম ছিলো। গ্রামের জমিদারদের দ্বারা নির্মিত এ দুর্গা মন্দির শুরু থেকে জাগ্রত ছিল কিন্তু নরেন্দ্র মালাকার পর্যন্ত তার প্রভাব থাকলেও পরবর্তীতে নদীভাঙ্গনের ফলে গ্রামের সবকটি পরিবার  কাঁটাতারের ভিতর চলে আসেন । তবে বাড়িঘর ছেড়ে চলে আসলেও হৃদয় রঞ্জন মালাকার পর্যন্ত

সর্বশেষ ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পূজার্চনা চালিয়ে গিয়েছিলেন এরপর থেকে মন্দির বন্ধ হয়ে যায় । যেহেতু লোকজন নাই ফলে গোটা মন্দির গাছগাছারী ইত্যাদিতে আবদ্ধ হয়ে যায় । মন্দির প্রায় নিশ্চিহ্ন ছিল হঠাৎ ২০০৮ সালে কর্মরত বিএসএফের মুনিপুরি সম্প্রদায় এক জওয়ান দেখতে পেলেন জঙ্গলের ভিতরে প্রদীপের আলো জ্বলছে । তিনি বিষয়টি গ্রামের মানুষকে বলেন কেউ তখন বিশ্বাস করেনি কারণ নতুন প্রজন্ম অধিকাংশ সেখানে মন্দির আছে বলে তাদের জানা ছিল না । পরবর্তীতে সম্পূন নিরামিষ ভুজি হিন্দি ভাষী আরেকজন বিএসএফ জওয়ান দুর্গাপূজার সময় দেখতে পেলেন সেখানে কে যেন আরতী দিচ্ছে । অনেক সময় ধরে প্রায় ঘন্টার অধিক সময় হবে ফলে বিষয়টি তিনি তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের  অবগত করালেন ২০০৯ সালে বিএসএফের আধিকারিক ও জওয়ানদের এক প্রতিনিধি দল মন্দির প্রাঙ্গণে আসেন এবং গ্রাম সদস্য অপ মালাকারকে নির্দেশ দেন আজকের ভিতরে গ্রামের লোকজনকে নিয়ে এই মন্দির উদ্ধার করতে হবে । সীমান্তে বিএসএফ একমাত্র ভরসা সুখে দুঃখে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে তাই বিলম্ব না  আধিকারিকদের নির্দেশ পেয়ে গ্রামের

হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লোক বিএসএফের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার অভিযানে নেমে পড়েন। এবং মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে  মন্দিরটি উদ্ধার করলেন ।

মন্দির উদ্ধার হলেও মন্দিরটির ভগ্ন দশা দেখে  পরবর্তীতে বিএসএফের জওয়ানদের আর্থিক সহযোগিতায় মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হয় ।

সংস্কার পর্ব শেষে এই বছরই  দুর্গাপূজা ও কালীপুজোর মধ্যেই একদিন নতুন অভিষেক হয় মন্দিরের । একি সঙ্গে গ্রামের মানুষের কাছে সমজেদেওয়া হয় মন্দিরটি।  এরপর থেকেই প্রতিদিন পূজার্চনা হয়ে যাচ্ছে । প্রথম কয়েক বছর প্রতিদিন সেখানে পূজা দিয়েছিলেন শিল্পী মালাকার নামে একজন মহিলা পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ঝুমুর মালাকার ,পূর্ণিমা মালাকার, শুক্লা মালাকার ,সকাল সন্ধ্যা পূজার পাশাপাশি রাতে ঘুমানোর জন্য মায়ের বিছানার ব্যবস্থাও আছে । তবে মাসে একদিন ব্রাম্মন এসে মন্দিরে পূজা দেন ।

অপু বাবু জানান প্রতিবছর দুর্গাপূজা জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন হয় ।গ্রামের মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। তাই সরিষা, মানিকপুর, বাকরশাল সহ বিভিন্ন এলাকার জনগণকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয় এবং চাঁদা তুলে পূজার্চনা চলে । যে বছর থেকে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে সেই বছর থেকেই মায়ের মূর্তি দিয়ে আসছেন দুলাল পাল নামে শহরের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি । কিন্তু এবার উনার পারিবারিক সমস্যার জন্য ও ধর্মীয় বিধি নিষেধ থাকায় এবার মূর্তি দিতে পারছেন না । তবে মায়ের পূজা বলে কথা এবারের মূর্তি দিতে নিজে থেকে এগিয়ে এলেন জবাইনপুরের আশিস মালাকার । মায়ের কাছে চাকরির প্রার্থনা সফল হওয়ার জন্য এক যুবক নিজে থেকে চাঁদা দিয়ে যায় আবার অন্য এক যুবক গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে গিয়ে চাঁদা তুলবে বলে কমিটিকে জানায় এবং চাঁদা সংগ্রহ করতে নেমে পড়ে এক সময় এই যুবক এসব থেকে ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে রাখতো নিজে থেকে ।

এদিকে বিস্তারিত তথ্য জানাতে গিয়ে গ্রাম পঞ্চায়তের গ্রূপ সদস্য অপু মালাকার বলেন মন্দির উদ্ধার না হওয়ার পিছনে মন্দিরের ভূমি । এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা চলছিলো ফলে কেউ এই মন্দির নিয়ে এতো চিন্তা করেনি । তবে মামলা আদালতে চলা অবস্থায় মায়ের মন্দির উদ্ধার বা জাগ্রত করার পিছনে বড় ভূমিকা ভারতীয় সেনা বিএসএফের । কারণ তারা উদ্যোগ না নিলে আজও মন্দির জঙ্গলে ঘেরা থাকতো। তিনি জানান নিয়ম মেনে পূজা চারদিন হলেও মহালয়া থেকে বেল ষষ্ঠী পর্যন্ত চন্ডী পাঠ হয় । এবার পূজা কমিটির সভাপতি পরিমল মালাকার এবং সম্পদক চম্পক মালাকার ।

বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মায়ের ভক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এমন আশা ব্যক্ত করেন অপু মালাকার ।

এদিকে বিএসএফের এক জওয়ান জানালেন প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা মায়ের দর্শনের জন্য আসেন । প্রতিদিন চার বার গেইট খুলে দেওয়া হয় । সকাল ৬ টা থেকে ৭টা পর্যন্ত। আবার ৯ টা থেকে ১১ টা ।

বেলা ২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত । কাঁটাতারের বাহিরে থেকে মায়ের দর্শন যেকোন সময় করা যাবে ।  নির্দ্ধারিত সময়ের মধ্যে এলে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন তবে এর জন্য পরিচয় পত্র সঙ্গে থাকতে হবে ।