প্রিয়াঙ্কা গান্ধী গ্রেপ্তার

Published: 6 October 2021

পোস্ট ডেস্ক :


সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশ। রাজ্যের লখিমপুর খেরি জেলায় চার কৃষকসহ কমপক্ষে আটজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রবিবার রাত থেকে আটক ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সরকারি নিয়ম ভাঙার অভিযোগে গতকাল মামলা করা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে। প্রিয়াঙ্কাসহ কংগ্রেস নেতা দীপেন্দ্র হুদা, অজয় কুমার লাল্লুসহ মোট ১১ জনকে আসামি করেছে রাজ্যের হরগাঁও থানার পুলিশ।

এদিকে দেশের রাজধানী দিল্লি থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। এতে দাবি করা হয়, তাঁকে কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হচ্ছে না। কোন ধারায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাও জানাচ্ছে না পুলিশ। এমনকি আইনজীবীর সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।

ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল গত রবিবার। উত্তর প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রকাশ মোর্য ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র ওই দিন উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথে লখিমপুর খেরিতে কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়েন তাঁরা। বহরের সঙ্গে থাকা অজয় মিশ্রের ছেলে গাড়িচাপা দিয়ে চার কৃষককে হত্যা করেন বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় সরকারের বিতর্কিত কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত নভেম্বর থেকে দিল্লির আশপাশে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন সারা দেশের কৃষক। ওই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে কৃষকরা ওই জায়গায় জমায়েত হয়েছিলেন। রবিবারের ঘটনার জেরে এক সাংবাদিক ও চার কৃষকসহ কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন।

প্রিয়াঙ্কা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন ওই দিনই। ওই দিন রাত থেকে রাজ্যের সীতাপুরে একটি গেস্ট হাউসে গতকাল সারা দিন তাঁকে আটক রাখে পুলিশ। হরগাঁও থানার পুলিশ জানিয়েছে, শিগগিরই আসামিদের আদালতে তোলা হবে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানার কাছে চিঠি লিখেছেন। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাজ্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়ারও আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা ভুপেশ বাঘেলকে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের বিমানবন্দরে গতকাল প্রায় অর্ধদিন আটকে রাখে রাজ্যপুলিশ। প্রিয়াঙ্কার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও বিক্ষোভে যোগ দিতে লখনউয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে ঢুকতে না পেরে ছত্তিশগড়ে ফিরে গেছেন তিনি।

তবে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টির নেতা ও রাজ্যর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধিদের ঘটনাস্থলে যেতে বাধা দেওয়া হলেও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য সুস্মিতা দেব কৃষক পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন।

এদিকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ সরকারের নীরবতা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছে বিজেপিবিরোধী দলগুলো। কংগ্রেসের মুখপাত্র রনদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ ট্র্যাজেডির জেনারেল ডায়ার’।

এদিকে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রউত গতকাল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকারের বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপিবিরোধী আঞ্চলিক দল, বামপন্থী দলগুলো এবং বিজেপিবিরোধী সব সংগঠন গতকাল সারা দেশেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। অভিযুক্ত মন্ত্রীর পদত্যাগ, তাঁর ছেলের গ্রেপ্তার ও ঘটনাস্থলে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা।