সাহাবায়ে কিরামের সংকলিত কয়েকটি হাদিসগ্রন্থ

Published: 14 January 2022

মুফতি মাহমুদ হাসান

নবী করিম (সা.)-এর হাদিস ও সুন্নাহ এমন প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যার কোনো তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। হাদিস ও সুন্নাহর ওপর কখনো বিস্মৃতির ছায়াপাতও ঘটেনি। সাহাবায়ে কিরামের যুগেই হাদিস শরিফের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ লিপিবদ্ধ আকারেও সংকলিত হয়েছে। নিম্নে এমন কয়েকটি সংকলনের পরিচয় উল্লেখ করা হলো—

১. আস-সহিফাতুস সাদিকা

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর সংকলিত একটি হাদিস সংকলন, যার নাম তিনি রেখেছিলেন ‘আস-সহিফাতুস সাদিকা’। পরে এটি তাঁর পৌত্র বিশিষ্ট তাবেয়ি শুআইব ইবনে মুহাম্মাদ (রহ.)-এর কাছে সংরক্ষিত ছিল। তাঁর বাবা যৌবনেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ফলে তিনি দাদার কাছে প্রতিপালিত হয়েছেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেছেন। শুআইবের কাছে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর গ্রন্থগুলো বিদ্যমান ছিল। তিনি তা থেকে দাদার উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করতেন। এগুলো আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর গ্রন্থ হিসেবে প্রমাণিত। (তাহজিবুত তাহজিব : ৮/৫৪)

পরে তাঁর ছেলে আমর (রা.) এই আমানত গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর বাবার উদ্ধৃতিতে হাদিস বর্ণনা করতেন। মুহাদ্দিসিনে কিরামের সিদ্ধান্ত এই যে বাবার গ্রন্থগুলো তাঁর হাদিস বর্ণনার মূলসূত্র। তাঁর বর্ণিত হাদিসগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘সহিফায়ে সাদিকা’রই বর্ণিত রূপ। গ্রন্থরূপ থেকে বর্ণনারূপে রূপান্তরিত হয়ে ‘সহিফায়ে সাদিকা’ হাদিসের কিতাবগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।

২. কিতাবুস সাদাকা

হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) তাঁর খিলাফত আমলে যখন আনাস (রা.)-কে বাহরাইনের গভর্নর নিযুক্ত করেন, তখন তাঁকে সদকাবিষয়ক একটি লিখিত দলিল প্রদান করেছিলেন। সম্ভবত এটিও আগের ‘কিতাবুস সাদাকা’রই অনুলিপি ছিল। আনাস (রা.)-এর পৌত্র সুমামা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আনাস (রা.)-এর কাছে তা সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তী সময়ে হাদিসের কিতাবগুলোতে সহিহ সনদে তা সংকলিত হয়েছে। (দেখুন : বুখারি, হাদিস : ১৪৫৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩২৬৬)

এ ছাড়া অন্যান্য হাদিসগ্রন্থে এর বিভিন্ন অংশ সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে সংকলিত হয়েছে।

৩. সহিফায়ে আলী (রা.)

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে কোরআন শরিফ এবং এই সহিফায় লিখিত বিধানাবলি ছাড়া আর কোনো বিধান স্বতন্ত্রভাবে লিখে রাখিনি। (বুখারি, হাদিস : ৩০৪৭)

৪. সহিফায়ে ইবনে আব্বাস (রা.)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর আজাদকৃত গোলাম কুরাইব (রহ.) বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে সংরক্ষিত এলেমের এমন একটি বোঝা অর্জন করেছি, যা একটি উটের বোঝা পরিমাণ হবে। (তাবাকাতে ইবনে সাদ : ৫/২২৫-২২৬)

৫. সহিফায়ে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)

আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রহ.) একটি কিতাব বের করে বলেন, আল্লাহর কসম! এই কিতাবটি আমার বাবা আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর লিখিত। (জামেউ বয়ানিল ইলম : ১/৩১১/৩৯৯)

৬. সহিফায়ে সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.)

সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.)-এর ছেলে সুলাইমান তাঁর বাবা থেকে একটি কিতাব বর্ণনা করেন, যার মধ্যে অনেক হাদিস লিখিত ছিল। (তাহজিবুত তাহজিব : ৪/১৯৮)

৭. সহিফায়ে সাদ ইবনে উবাদা (রা.)

ইবনে সাদ (রহ.) বলেন, সাদ ইবনে উবাদা (রা.) একটি পুস্তক সংকলন করেন, যাতে অনেক হাদিস লিখেছিলন। (তাবাকাতে ইবনে সাদ)

৮. রিসালায়ে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)

সহিহ মুসলিমে রয়েছে যে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-এর হজের বিস্তারিত আহকামসংক্রান্ত হাদিসগুলো লিখিত ছিল।

৯. সহিফায়ে আনাস ইবনে মালেক (রা.)

হুবাইরা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, আমরা যখন আনাস (রা.)-এর কাছে হাদিসের ইলম শিখতে ভিড় করছিলাম, তখন আনাস (রা.) একটি পুস্তক বের করে এনে আমাদের দিলেন এবং বললেন, নাও! এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনে লিখেছি। (মুসনাদে শামিয়্যিন, তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭)

১০. আবু হুরায়রা (রা.)-এর লিখিত সহিফাসমূহ

আবু হুরায়রা (রা.)-এর লিখিত হাদিস সংকলনের কথা মুস্তাদরাকে হাকেম (হাদিস নম্বর ৬১৬৯) ও জামেউ বয়ানিল ইলম (হাদিস নম্বর ৪২২)-এর মধ্যে উল্লেখ আছে।

লেখক : শিক্ষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা