সুনামগঞ্জে এবার ডুবলো হাওরের আরও ৬ হাজার একর ধান
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা :

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দুঃস্বপ্নের মতো উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ী ঢলের পানি। সুনামগঞ্জের নানা হাওরের পর এবার বাঁধ ভেঙ্গে ডুবেছে প্রায় ৬ হাজার একর আধাপাকা কাঁচা বোরো ধান। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে স্থানীয় কৃষকদের চোখের সামনে এরাইল্লাকোনা হাওর বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে ডুবে যায়। এসময় হাওরপারের কৃষকদের আহাজারিতে আকাশপাতাল ভারী হয়ে উঠে। এ হাওরে মন্দিয়াতা, জয়পুর, গোলাবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা বোরো ধান রোপন করেছিলেন। এ বাঁধটি ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে দেয়া হয়েছিল। রাতদিন স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকরা পরিশ্রম করেও শেষ রক্ষা হয়নি।
হাওর পারের মন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সানজু মিয়া জানান, শুক্রবার সকাল আটটার দিকে হঠাৎ বাঁধটি ভেঙ্গে প্রায় ৬ হাজার একর বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আর সপ্তাহখানেক সময় পেলে কৃষকরা এ হাওরের ধানগুলো গোলায় তুলতে পারতেন।
তিনি বলেন, ‘বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলার পরও এখানে সরকারের পক্ষ্য থেকে কোন বাঁধ দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের কিছু অর্থায়নে আর কৃষকরা স্বেচ্ছায় মাটি কেটে এ বাঁধটি তৈরি করেছিলেন।’
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বৌলাই, যাদুকাটা, রক্তি ও পাটলাই নদীগুলো পাহাড়ী ঢলের পানিতে এখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। নদীগুলোতে পানির চাপ বেশি থাকায় এরাইল্লাকোনা হাওরের পাশেই বৃহৎ মাটিয়ান, শনি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের উপর চাপ পড়ছে। কোন কোন বাঁধে ফাটল, কোনটিতে দেবে যাওয়া আবার কোনটিতে বাঁধের নীচের ফুলফা দিয়ে হাওরের ভিতরে পানি প্রবেশ করছে। আর এসব ঠেকানোর জন্য কৃষকরা রাতদিন স্বেচ্ছাশ্রমে পরিশ্রম করছেন।
শনির হাওরপাড়ের কৃষক উস্তার মিয়া বলেন, নদীগুলোতে যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ২০১৭ সালের মতো সকল হাওরের ফসল অকাল বন্যায় ডুবে যাবে।
মাটিয়ান হাওরের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, শনির হাওরের সাহেবনগর বাঁধ ও নান্টুখালী বাঁধটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ হাওরটিতে তাহিরপুর উপজেলা, জামালগঞ্জ উপজেলা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। অপরদিকে উপজেলার দ্বিতীয় বৃহৎ বোরো ফসলী ধানের হাওর হলো মাটিয়ান হাওর। এ হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো হলো— ধরন্দ বাঁধ, আলমখালি বাঁধ, বনুয়া বাঁধ ও আনন্দনগরের পূর্বাংশের বাঁধ।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রায়হান কবীর বলেন, টাঙ্গুয়া হাওরের ভিতরে এরাইল্লা কোন বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডেও আওতাভুক্ত নয়। যে কারণে এখানে সরকারি কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। স্থানীয় কৃষকরা নিজেরা এ বাঁধটি বিভিন্ন মাধ্যমে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, বৃহৎ শনি ও মাটিয়ান হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। বাঁধগুলোর বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। পানির ওভার ফ্লো (উপচে পড়া) যদি না হয় তাহলে আর কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।




