ভ্রমণ সম্পর্কে মহানবী (সা.) যা বলেছেন
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বাহার
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিরহস্যের নানা উপকরণ। প্রতি মুহূর্তে মানুষকে তা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। মন প্রফুল্ল রাখতে ও শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে এবং জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। তাইতো প্রতিনিয়ত মানুষ বিশাল এ ধরিত্রীর নানা অংশে ছুটে যায় সৃষ্টির বিশালতা আর প্রকৃতির রূপকে আপন করে দেখতে।
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ভ্রমণের মাধ্যমে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও সৃষ্টির বিশালতা অবলোকন করে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাসীদের জন্য আছে অসংখ্য নিদর্শন। ’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ২০)
বিনোদন ছাড়াও জীবনের নানা প্রয়োজনে আমাদের আবাসস্থল ছেড়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। অন্য সব বিষয়ের মতো ভ্রমণ সম্পর্কেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে—
► সফরের ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম কাজটি হোক ইস্তিখারা। আপনার জন্য এ সফর কল্যাণকর হবে কি না—জেনে ফেলুন ইস্তিখারার নামাজের মাধ্যমে। (ঘুমের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়ে ইস্তিখারা করা হয়)। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সব ব্যাপারে ইস্তিখারা করতে শিখিয়েছেন, যেভাবে কোরআনের সুরা গুরুত্বের সঙ্গে শিখিয়েছেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৮৮৭)
► সফরকালে নানা রকম বিপদাপদের আশঙ্কা থাকে। সে জন্য যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ভালো করে খোঁজখবর নিন।
► সফরের সিদ্ধান্ত হলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস : ৪৯১২)
► যতটা সম্ভব একাকী সফর পরিহার করুন। একাকী সফর নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। সুতরাং ভালো কাউকে সফরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা! আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৮)
► অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করুন। যিনি পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করবেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ, হাদিস, ২৬০৯)
► সাতসকালে যাত্রা করুন। সাহাবি সাখর আল গামিদি ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘ভোরবেলাকে আমার উম্মতের জন্য বরকতে পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। ’
এর পর থেকে সাখর গামিদি (রা.) সকাল সকাল ব্যবসায় নেমে পড়তেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৪৭৫৪)
► পরিচিত ও প্রিয়জনদের থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিন। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৪)
আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৯২১৯)
► সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়ুন। গাড়িতে উঠে পড়বেন, ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন। ’
অর্থাৎ ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি এটিকে আমাদের আয়ত্তাধীন করেছেন, অথচ আমরা একে নিজেরা আয়ত্তাধীন করতে পারতাম না। ’ আর সফর শেষে পড়বেন, ‘আ-ইবুনা, তা-ইবুনা, আবিদুনা, লি রাব্বিনা হামিদুন। ’
অর্থাৎ ‘আমরা ফিরে এসেছি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আনুগত্যের প্রত্যয় নিয়ে এবং আল্লাহর প্রশংসায় মুখর হয়ে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৪২)
► সফর শেষে প্রথমে নিজ এলাকার মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। (বুখারি, হাদিস : ২৬০৪)
বাড়িতে হঠাৎ করে যাবেন না। আগে জানান, তারপর যান। (মুসলিম, হাদিস : ১৮০১)
আশা করা যায়, উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করলে সফরের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত বলে গণ্য হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টিরহস্য অবলোকনের মাধ্যমে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে প্রকৃতবোধ জাগ্রত হবে।