হিজাবে নারীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা
মুমিন নর-নারী বিশ্বাস করে তাদের জীবনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সুতরাং তারা তা সন্তুষ্টির সঙ্গে পালন করে। এটাই তাদের ঈমানের দাবি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোনো মুমিন পুরুষ বা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।
কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করলে সে তো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৬)
কোরআনের বর্ণনায় পর্দার নানা দিক : পর্দা বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনাগুলো হচ্ছে—
১. দৃষ্টি সংযত রাখা : কোরআন নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বোলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে; এটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বোলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)
২. নারীসুলভ সৌন্দর্য আড়াল করা : ইসলাম নারীকে তার নারীসুলভ সৌন্দর্য আড়াল করার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ছাড়া তাদের আভরণ প্রদর্শন না করে, তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩১)
৩. চলাফেরায় শালীন হওয়া : ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই শালীন পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)
৪. নারী-পুরুষের মেলামেশায় সতর্ক থাকা : নারী ও পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে ইসলাম সমর্থন করে না। পারস্পরিক আদান-প্রদানে ইসলাম নারী-পুরুষ সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তার স্ত্রীদের কাছে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৩)
পর্দায় নারীর ব্যক্তিত্বের বিকাশ
ইসলাম মনে করে, শরিয়ত নারী ও পুরুষকে পর্দা, হিজাব, সংযম ও শালীনতার যে বিধান দিয়েছে, মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক। নিম্নে ব্যক্তিত্ব বিকাশের কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো।
১. নৈতিক জীবনের নিশ্চয়তা : পর্দার বিধান মানুষকে নৈতিক জীবনের নিশ্চয়তা দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বৃদ্ধা নারী, যারা বিয়ের আশা রাখে না, তাদের জন্য অপরাধ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের বহির্বাস খুলে রাখে, তবে (নৈতিক জীবনযাপনের জন্য) এটা থেকে তাদের বিরত থাকাই উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৬০)
২. পবিত্র জীবনের নিশ্চয়তা : শরয়ি পর্দা পালন মানুষের জীবনকে পবিত্র করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তার স্ত্রীদের কাছে কোনো কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৩)
৩. রোগাক্রান্ত হৃদয়ের জন্য নিরাপত্তা : যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তাদের জন্য পর্দার বিধান সুরক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে পর-পুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বোলো না, যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩২)
৪. দোষ-ত্রুটির অন্তরাল : পর্দা মানুষের দোষ-ত্রুটির জন্য অন্তরালস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী নিজের ঘর ছাড়া অন্যত্র তার কাপড় খুলে ফেলে আল্লাহ তার থেকে (দোষ-ত্রুটির) অন্তরাল সরিয়ে দেন। ’ (সামিউস সগির, হাদিস : ২৯৫৫)
৫. আল্লাহভীতি অর্জনের মাধ্যম : পর্দার বিধান পালন ও শালীন জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহভীতির জীবন অর্জন করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আদমসন্তান, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশ-ভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি এবং তাকওয়ার পোশাক—এটাই সর্বোত্কৃষ্ট। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬)
৬. ঈমানের পরিচায়ক : পর্দা তথা লজ্জা ও শালীনতা মানুষের ঈমানের পরিচায়ক। পাতলা কাপড় পরিধান করে বনু তামিমের কিছু নারী আয়েশা (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি বলেন, ‘যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তবে এটা মুমিন নারীর পোশাক নয়। আর যদি মুমিন নারী না হয়ে থাকো, তবে তোমরা তা উপভোগ কোরো। ’ (তাফসিরে কুরতুবি : ৭/২৩১)
৭. আত্মমর্যাদার অনুকূল : শালীন ও সংযত জীবন আত্মমর্যাদার অনুকূল। আলী (রা.) বলেন, ‘আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে তোমাদের নারীরা বাজারে অনারব অবিশ্বাসী পুরুষের সঙ্গে ভিড় করে। তোমাদের কি আত্মমর্যাদাবোধ নেই? নিশ্চয়ই যার আত্মমর্যাদাবোধ নেই, তার কোনো কল্যাণ নেই। ’ (জামিউল মাসানিদি ওয়াস সুনান, হাদিস : ৮৮৩)
সর্বোপরি ইসলামের প্রত্যাশা হলো নারীরা এমন পোশাক পরিধান করবে, যা পরিধানের ফলে পোশাকের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয়। নতুবা নারী পোশাক পরে, এমনকি বোরকা পরে উলঙ্গপনার দোষে দুষ্ট হতে পারে। যাদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসী দুই প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত (হয়েও) উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। তারা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না। অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৪৭৫)