রিজার্ভের টাকা ব্যয় হয়েছে দেশের কল্যাণে : প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের কল্যাণেই রিজার্ভের টাকা ব্যয় হয়েছে। জনগণ ও দেশের জন্যই এই টাকা ব্যয় হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার এক টাকাও অপচয় করেনি। ’ আজ শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধনের সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আশুলিয়ার অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির সময় রিজার্ভের ঘাটতি ছিল, সেটা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে আওয়ামী লীগ সরকার। চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে বিএনপি নেতারা। আওয়ামী লীগ একটি টাকাও অপচয় করেনি। ’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যোগাযোগ-যাতায়াত-আমদানি সব কিছু প্রায় বন্ধ ছিল। যখন এই যোগাযোগটা খুলে গেছে, তখন আমাদের আমদানি করা, বিশেষ করে সারা বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক যে মন্দা দেখা দিয়েছে, তার আঘাতটা আমাদের দেশে এসে পড়েছে। আজকে রিজার্ভের টাকা থেকে আমাদের যেমন আমদানি ব্যয় মেটাতে হচ্ছে, পাশাপাশি আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাও বিনা পয়সায় করেছি। পৃথিবীর উন্নত কোনো দেশ বিনা পয়সার টেস্টের ব্যবস্থা করেনি, ভ্যাকসিনও দেয়নি। আমরা নগদ টাকা দিয়ে প্রথমে ভ্যাকসিন কিনি। এরপর আমরা অনুদান পেয়েছি। আমরা কিন্তু নগদ টাকা দিয়ে কিনি। ’
‘খাদ্যপণ্যের দাম কিন্তু সারা বিশ্বে বেড়ে গেছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি-ভোজ্য তেল, গম, ভুট্টা, ডাল—যা কিছু আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। আমরা চাল উৎপাদন করছি, খাদ্য উৎপাদন করছি। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, তার পরও আমাদের আমদানি করতে হয়। যখন বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে ফসল নষ্ট হলো তখন আমাদের ফসল আমদানি করতে হয়েছে। আমরা যেটুকু খরচ করেছি সেটা জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। জনগণের খাদ্য, ক্যান্সারের ওষুধ কেনা…জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের করতে হয়েছে। সার, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ আমাদের কিন্তু কিনতে হচ্ছে। নগদ টাকা দিয়ে আমরা কিনছি। তা ছাড়া আমাদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে আমরা কিন্তু বিমান কিনেছি। নদী ড্রেজিং, সেটাও আমরা নিজেদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে করছি’, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিছু কিছু আমরা বিনিয়োগ করছি এই কারণে সেটা হলো, আমরা যদি অন্য দেশ থেকে লোন নিই আমাকে সুদসহ সেই ডলার পরিশোধ করতে হয়। আমাদের ডলার যদি আমরা খরচ করি, আমরা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দিচ্ছি, তাতে করে সুদসহ টাকাটা…আমাদের দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়। সেটাকে লক্ষ্য করে আট বিলিয়নের মতো আমরা খরচ করেছি। যখন শ্রীলঙ্কা খুব অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে তাদেরকেও কিছু টাকা আমরা ধার দিয়েছি। ’
‘এখানে কিন্তু পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি। তাদের মনে সব সময় ও রকম ভয় থাকে, এ কথা তারা বলে। বিএনপি, বিশেষ করে বলবে। বলার কারণটা হচ্ছে, তাদের নেতা তারেক জিয়া মানি লন্ডারিং কেসে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড পেয়েছে এবং সে পলাতক আসামি। মানি লন্ডারিং যাদের অভ্যাস তারা শুধু ওইটাই জানে টাকা বোধ হয় সব নিয়ে যেতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের একটা অর্থও অপচয় করে না। প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে-কল্যাণে এবং তাদের ভালো-মন্দ দেখে’, বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি আর নিয়েও যায়নি। তবে হ্যাঁ, বিএনপি বলবে। তারা নিজেরা চুরি করে অর্থ-সম্পদ বানিয়েছে। কারণ তাদের তো কিছুই ছিল না। জিয়াউর রহমান যখন মারা যায়, আমরা ৪০ দিন টেলিভিশনে দেখেছি, ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরেবর্তী সময়ে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তারা। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করেই তারা তা হয়েছে। ’
সবাইকে উৎপাদনে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে। বিশ্বব্যাপী একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত, তারপর করোনা, তার ওপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা; যার ফলাফলে আজকে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম-পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সফল উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি নিশ্চয়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের মাটি মানুষ আছে, আমরা তা করতে পারব। যাদের নিজের জমি আছে সেখানে যাতে চাষ হয় সে ব্যবস্থা নেবেন। যদি কখনো বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় আমাদের বাংলাদেশে যেন সেই ধাক্কা কোনোভাবেই না লাগে। আমাদের সাবধানতা আমাদেরই নিতে হবে। ’
‘আমরা চাই, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। আমরা বঙ্গবন্ধু টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রো রেল তৈরি করছি। সবগুলোতেই আমাদের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। রিজার্ভের টাকা তো লাগছে। এটা তো বাস্তবতা। মানুষের যোগাযোগ-চলাচল আরো সহজ হয় যাতে তার ব্যবস্থা করছি। আমরা সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথ; সবগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি। এটা আকাশ থেকে পড়েনি। বেশির ভাগ কাজ আমরা নিজেদের অর্থ দিয়ে করছি, যেন কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অপরদিকে আশুলিয়া বাজারের কাছে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-৩ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক লি ইউয়েন জিয়ান, ভাইস চেয়ারম্যান জো জিং জিয়াং সিএমসি ও সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল বিজনেস সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জো ইয়াং লিসহ কর্মকর্তারা।
চীনা এক্সিম ব্যাংক এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। মোট ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ দেবে চীন। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল এবং ইপিজেডকে যুক্ত করবে।