বান্দরবানে মাদককারবারীদের গুলিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিহত, আহত র্যাবের কর্মকর্তা
বিশেষ সংবাদদাতা :

সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তার রিজওয়ান রুশদী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন র্যাকের আরেক কর্মকর্তা। সোমবার রাতে বান্দরবানের তুমুদ্রু সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে চোরাকারবারিদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায় শেষশয্যায় শায়িত করা হয় তাঁকে। ওই ঘটনায় আহত র্যাব সদস্য সোহেল বড়ুয়া আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় মাদক চোরাচালানকারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সোমবার দিবাগত রাত ১টায় আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘র্যাব এবং ডিজিএফআইয়ের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনাকারীদের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তমব্রু সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ হয়। মাদক চোরাচালানকারীদের সঙ্গে এই সংঘর্ষ চলাকালে মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআইয়ের একজন কর্মকর্তা (বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা) দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহীদ হন এবং র্যাবের একজন সদস্য আহত হন। ’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে নিহত ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তার নাম রিজওয়ান রুশদী। তিনি বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার ছিলেন। ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ১ জুন তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত ১৬ মে থেকে তিনি ডিজিএফআইয়ে প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা স্কোয়াড্রন লিডার আঞ্জুমা রুম্মানকে বিয়ে করেন।
রিজওয়ান রুশদীর পাংশা উপজেলার পুঁইজোর গ্রামের ডা. আব্দুল মতিনের ছেলে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
বিকেল ৫টার দিকে রাজবাড়ীর পাংশা পৌর শহরের মৈশালা এলাকায় পাংশা চক্ষু হাসপাতাল চত্বরে রিজওয়ান রুশদীকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে মরদেহ পাংশা সরকারি জর্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনা হয়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় জর্জ স্কুলমাঠে হাজারো মানুষের ঢল নামে। গার্ড অব অনার প্রদানকালে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহাসহ বিমানবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালে অস্ত্রোপচার : র্যাব সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ওই ঘটনায় আহত র্যাব সদস্যের নাম সোহেল বড়ুয়া (৩০) র?্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নে কর্মরত। ঘটনার পর দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে সোমবার দিবাগত রাতেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মিজানুর রহমান দুপুরে বলেন, ‘সোমবার রাত ১০টার দিকে সোহেল বড়ুয়া নামের একজন র্যাব সদস্যকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ’
গত মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ওই র্যাব সদস্যকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এনে অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন এই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফজলে এলাহী। তিনি বলেন, ‘আহত র্যাব সদস্যের মাথায় আঘাত রয়েছে। আমরা সিটি স্ক্যান করি। এতে আঘাতের একটি স্থানে রক্ত জমাট দেখা যায়। পরে অপারেশনের মাধ্যমে তা অপসারণ করেছি। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। হাসপাতাল থেকে দু-এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। ’
সোহেল বড়ুয়ার ভাই অশোক বড়ুয়া বলেন, ‘চিকিৎসকরা বলেছেন, আমার ভাই এখন শঙ্কামুক্ত। এখন ভাই কথাও বলছেন। এমন বিপদ যেন কোনো পরিবারে না আসে। ’
র্যাব ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আহত র্যাব সদস্য সোহেল বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আকররশাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায়।
পুলিশ যা বলছে : নাইক্ষ্যংছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহজাহান স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সন্ধ্যায় জানান, সীমান্তের ঘটনা নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। তবু তারা (থানা কর্তৃপক্ষ) ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
যা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তমব্রু সীমান্তে গোয়েন্দা (ডিজিএফআই) কর্মকর্তা নিহতের বিষয়ে বলেন, ‘দুর্ঘটনাবশত একজন অফিসার সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিনি কিভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন এবং কোন মাদক কারবারিরা তাঁকে গুলি করলেন এসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ ঘটনার সত্য উদঘাটন করে আমরা পরবর্তী সময়ে জানাব। ’
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০২২-এর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযানের জায়গাটি নো-ম্যানস ল্যান্ড। সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করে। যখন এ ধরনের অভিযানে যাওয়া হয়, তখন গোয়েন্দা সংস্থা পরিকল্পনা করে অভিযানে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।




