সমকামিতার ফাঁদে আমিরের মৃত্যু , চক্রের ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

Published: 18 May 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং মেসেঞ্জারে বিভিন্ন লোককে সমকামিতার প্রস্তাব দিত চক্রটি। এরপর কেউ রাজি হলে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতেন তারেক ও মোহাম্মদ আলী। এরপর দেখা করার জন্য ডেকে আগ্রহী তরুণদের জিম্মি করে টাকা-পয়সা আদায় করে ছেড়ে দিতেন চক্রের সদস্যরা।

২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে এই চক্রের ডাকে ঢাকায় আসেন আমির হোসেন। তাকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না পেয়ে আমিরকে হত্যা করে লাশ গুম করে তারা।

এই চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমির হোসেনের বস্তাবন্দী দেহাবশেষ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো তারেক ওরফে তারেক আহাম্মেদ, মোহাম্মদ হৃদয় আলী, আশরাফুল ইসলাম, রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবু। তারা মুক্তিপণ না পেয়ে এবং পুলিশের কাছে ধরা পরার ভয়ে অপহৃত আমিরকে হত্যা করে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বেলা ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

তিনি বলেন, ভিকটিম আমির হোসেন নোয়াখালী থেকে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর দক্ষিণখানে তার বোনের বাসায় বেড়াতে এসে নিখোঁজ হন। এ ঘটনার দক্ষিণখান থানায় ২৮ ডিসেম্বর একটি জিডি হয়। গত ১৩ এপ্রিল তার ভাইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানায় একটি অপরহণ মামলা রুজু হয়। মামলাটি তদন্তকালে প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে আশরাফুল ইসলাম, রাসেল সরদার ও তৌহিদুল ইসলাম বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (১৭ মে) দক্ষিণখান থানার একটি টিম নোয়াখালীর দুর্গম হাতিয়া দ্বীপে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণ চক্রের মূলহোতা তারেক ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করে। পরে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানা এলাকার একটি বাড়ির পরিত্যক্ত সেফটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে ভিকটিমের হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্দী দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

ডিসি উত্তরা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণ চক্রের মূল হোতা তারেক জানায়, সে একজন সমকামি। ফেসবুকে তার একটি আইডি আছে। সে বিভিন্ন সময় মেসেঞ্জারে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সমকামিতার প্রস্তাব দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতো। এক পর্যায়ে দেখা করার জন্য এলে কৌশলে তাদের গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় তাদের মেসে নিয়ে যেতো এবং মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিতো। এটাই ছিল তার পেশা। একইভাবে গ্রেফতারকৃত তারেক ভিকটিম আমিরকেও ডেকে নিয়ে যায়। আমিরকে আটকে রেখে তার বোনের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। প্রত্যাশিত মুক্তিপণ না পেয়ে এবং পুলিশের কাছে ধরা পরার ভয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর ভিকটিমকে হত্যা করে লাশ সেফটিক টাংকিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা অন্য কোন অপরাধে জড়িত কিনা সে ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত আছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।