দেশে সাপের কামড়ে বছরে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মৃত্যু

Published: 18 June 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


দেশে প্রতিবছর ৪ লাখেরও বেশি (৪ লাখ ৩ হাজার ৩১৭) মানুষকে সাপে কামড়ায়। যাদের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি (৭ হাজার ৫১১ জন) মানুষের মৃত্যু হয় বলে সরকারি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাপের কামড়ের ঘটনাগুলোর ৯৫ শতাংশই গ্রামঞ্চলে ঘটে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ পরে শারীরিক এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভোগেন।

বাংলাদেশে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ওপর ২০২১-২০২২ সালে করা ১৭টি গবেষণা প্রতিবেদন রোববার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা।

সেখানে বলা হয়, নারীদের চেয়ে পুরুষরা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি সাপের কামড়ের ঝুঁকিতে থাকে। সাপের কামড় এবং মৃত্যুতে বাংলাদেশ ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ থাকলেও এখানে কোনো ওষুধ তৈরি হয় না।

ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগ ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি হয়।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহায়তায় দেশব্যাপী দৈবচয়নের ভিত্তিতে নির্ধারিত ২০০টি পিএসইউ এর ৬২,০০০ খানাতে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্বে চিকিৎসা গ্রহণ করা ৪০০ জন সর্পদশংন রোগীর শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা যাচাই করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ২৪৪ জন সাপের কামড়ের শিকার হন এবং প্রায় ৫ জন মানুষ মারা যায়। মোট আক্রান্তের ৯৫ ভাগই হলো গ্রামে। আর এসব সাপের কামড়ের ৪ ভাগের এক ভাগ বিষাক্ত সাপের কামড়ে হয়ে থাকে। যার মাঝে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক এবং ১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে থাকে।

সাপে কামড়ের বেশি ঘটে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে। ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী পুরুষেরা বাড়ির আশেপাশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের ভেতরে সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হন।

জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দংশনের পর অঙ্গে গিঁট দেন এবং ৬৫ ভাগ মানুষ প্রথমেই ‘ওঝা’ বা প্রচলিত চিকিৎসকের নিকট চিকিৎসা নেন। সর্পদংশনের পরে প্রতি হাজারে ২ জন মানুষের অঙ্গহানি ঘটে এবং ২ থেকে ২৩ ভাগ মানুষ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থ্যতা ভোগ করেন। সর্পদংশনের পর শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অবসাদগ্রস্থতায় আক্রান্ত হন। প্রতিটি সর্পদংশনের কারণে চিকিৎসার জন্য দংশিত ব্যক্তির প্রায় ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

এই জরিপে আরও জানা গেছে, মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীরাও সাপের কামড়ের শিকার হচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রতিবছর প্রায় ১৯ হাজার গৃহপালিত পশু সর্পদংশনে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে আড়াই হাজার গৃহপালিত পশু মারা যায়। ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিবছর সাপের কামড়ে মৃত্যু সংখ্যাটি অনেক বড়। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। আমাদের একটি ভেনোম কালেকশন সেন্টার রয়েছে। সেখানে ভেনোম কালেকশন হচ্ছে। সাপের বিষ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন তৈরিতে চট্টগ্রামে ভেনম সেন্টার হয়েছে, সেখানে গবেষণা চলছে। আমরা আশা করছি সাপে কামড়ের ওষুধ তৈরি করতে পারব। এ বিষয়েও অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আগামীতে জোর দেব যেন স্নেকবাইটের অ্যান্টিভেনোম তৈরি করা যায়।