কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঘুমন্ত মা-ছেলেকে হত্যা
বিশেষ সংবাদদাতা :

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পৈতৃক জায়গা সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারার পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘুমন্ত চাচি আয়েশা আক্তার নিপা ও তার ৮ বছর বয়সী পুত্র আলী আহসান মুজাহিদকে লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ভাতিজা আবদুল্লাহ আল শাহেদ। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিশোর শাহেদ ও তার ভাই মঈনুল হাসান শুভকে আটক করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার পাঁচরা এলাকায় গত মঙ্গলবার গভীর রাতে। হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, হত্যাকাণ্ডের শিকার গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপার স্বামী আনোয়ার হোসেন, তার বড় ভাই মো. সিরাজ ও মেজো ভাই মীর হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় ও থানায় একাধিক সালিশি সভা হয়। বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো। ঝগড়া শেষে আটককৃত আবদুল্লাহ আল শাহেদের মা ফাতেমা বেগম সন্তানদের সামনে কান্নাকাটি করতো।
ধারণা করা হচ্ছে, এ নিয়ে সন্তানদের মধ্যে একটা ক্ষোভ কাজ করতো। আবদুল্লাহ আল শাহেদ একই এলাকার স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। ঈদের ছুটি থাকায় শাহেদ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন।
আমরা সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিছানাতে গৃহবধূর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখি। লাশের পাশে রক্তমাখা লাকড়ির তিনটি টুকরা ও ঘরের সিঁড়িতে একটি টুপি পাওয়া যায়। এ সময় আমাদের আবদুল্লাহ আল শাহেদের বড় ভাই মঈনুল হাসান শুভ জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে শাহেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই সন্দেহ হয় এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শাহেদ জড়িত থাকতে পারে। তাৎক্ষণিক তার মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ভোররাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা আমাদের খবর দেয়, শাহেদ মাদ্রাসায় এসে ঘুমাচ্ছে। আমরা তাকে ভোররাতেই মাদ্রাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ আল শাহেদ পুলিশকে বলেন- সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ও জ্যাঠাদের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো। মা আমাদের সামনে কান্নাকাটি করতো। বিষয়টি আমার সহ্য হতো না। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ঘরের ছাদের সিঁড়ির রুম দিয়ে কৌশলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে লুকিয়ে ছিল। এ সময় তার চাচি ও চাচাতো ভাই পাশ^বর্তী আজিজুল ইসলামের বাড়িতে দাওয়াতে ছিল। গভীর রাতে গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের ভেতরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচিকে সজোরে মাথায় আঘাত করি। এ সময় চাচি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা শিশু আলী আহসান মুজাহিদ জেগে উঠলে তাকেও সজোরে আঘাত করে হত্যা করে কৌশলে ঘরের ছাদের পাশের গাছ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যাই।
আবদুল্লাহ আল শাহেদের মা ফাতেমা বেগম বলেন, আমি এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা তিন জা একসঙ্গে গত রাতে দাওয়াতে ছিলাম। রাতে চিৎকার শুনে সবার মতো আমিও ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারি, আমার জা ও তার শিশু সন্তান খুন হয়েছে। এখন পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আবদুল্লাহ আল শাহেদ এ দু’জনকে হত্যা করেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিপার মা নাছিমা বেগম বলেন, ‘নিপাও চলে গেল, নাতি মুজাহিদও চলে গেল, এখন আড়াই বছরের জিহাদের কি হবে? তাকে কে দেখবে?। আমি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
হত্যাকাণ্ডের শিকার আয়েশা আক্তার নিপার বাবা জালাল আহমেদ বলেন, তার মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেনের ভাইয়ের ছেলে আবদুল্লাহ আল শাহেদ এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে শিকার করেছে। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে সম্পত্তির জন্য তার ভাসুর পুত্ররা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যা করেছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘ইতিমধ্যে মা ও ছেলেকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গৃহবধূর বাবা জালাল আহেমদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। এ ঘটনার মূল আসামি কিশোর আবদুল্লাহ আল শাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’।
চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট সার্কেলের এএসপি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি তা তদন্ত করা হচ্ছে’।




