হামাস নেতাদের হত্যায় প্রস্তুত ১০ হাজার সেনা
পোস্ট ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে এখন ইসরাইলের স্থল হামলার দামামা। শত শত ট্যাংক, সাঁজোয় যান আর লাখ লাখ সেনা। চলতি সপ্তাহেই স্থল হামলা শুরু করতে পারে ইসরাইল। দক্ষিণ ইসরাইলের গাজা সীমান্তে ইতোমধ্যে ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আর গাজা নেতাদের হত্যায় ১০ হাজার সেনার একটি বিশেষ দল অঞ্চলটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রোববার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গাজায় ইসরাইল সেনাবাহিনীর স্থল হামলার ছক সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য দিয়েছেন দেশটির তিন জৈষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা।
হামাসের নেতৃত্বকে নির্মূল, জিম্মিদের মুক্তি আর গাজা দখলের লক্ষ্যে অঞ্চলটিতে একটি উল্লেখযোগ্য স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ইসরাইল। সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে, তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী শাসক গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকর্তাদের নিশ্চিহ্ন করা।
তবে শুক্রবার জিম্মিদের পুনরুদ্ধারে একটি ছোট দল গাজায় প্রবেশ করেছে বলে জানায় তেল আবিব। তিন কর্মকর্তা আরও বলেন, হামাসের অনেক সদস্য এখন গাজা শহর ও উত্তর গাজার আশপাশের অংশের নিচে শত শত মাইল ভূগর্ভস্থ টানেল ও বাঙ্কারের ভেতর রয়েছে বলে মনে করছে ইসরাইল সেনাবাহিনী। সে কারণেই এই সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে। দফায় দফায় বিমান হামলাও চালাচ্ছে টানেলগুলোকে টার্গেট করে।
সামরিক কর্মকর্তারা আরও বলেন, ইসরাইলের হামলার একটি মূল লক্ষ্য হবে হামাসের ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করা। ৭ অক্টোবর অভিযানের জন্য সিনাওয়ারকে দায়ী করে ইসরাইল। এ বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচট (তিনজনের একজন) বলেছেন, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনাওয়ারকে হত্যার দিকে সৈন্যরা বিশেষভাবে মনোনিবেশ করবে।
আরেকজন কর্মকর্তা কর্নেল গোলান ভাচের মতে, আক্রমণটি প্রাথমিকভাবে ছুটির দিনের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে পরিস্থিতির কারণে তা কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলার বিষয়ে আইডিএফের মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘হামাসকে ধ্বংস করা আর তাদের হত্যার পর বাকি নেতাদের নির্মূল করাই হবে হামলার লক্ষ্য।’ ইসরাইলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস বলেন, ‘আমাদের অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাস ও এর সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা, যেন হামাস আর কখনো ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বা অপহরণ বা হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা না পায়।’
পদাতিক বাহিনী ছাড়াও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা দলে ট্যাংক, স্যাপার ও কমান্ডোও থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তারা ইতোমধ্যে গাজার কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে বলে জানায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরাইলের স্থল আক্রমণ যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে প্রস্তুত। ২০০৮ সালে গাজা আক্রমণের পর থেকে এই আক্রমণটি ভূমি দখলের প্রথম স্থল পদক্ষেপ হবে। এছাড়াও ২০০৬ সালে লেবানন আক্রমণের পর এটি ইসরাইলের সবচেয়ে বড় স্থল অভিযান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার নিউইয়র্ক টাইসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহের অভিযানের আগেই ইসরাইলের সেনা-গোয়েন্দাদের অবস্থান জানত হামাস। অভিযানের নির্ধারিত ওই সময়টিতে তারা (সেনা-গোয়েন্দা) কোথায় আছেন, কী করছেন তা আগেই জানত হামাসের ১০ জনের একটি দল। ভিডিও ফুটেজ থেকে পাওয়া তথ্যচিত্রে দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ইসরাইলে সেনাবাহিনী।
ভিডিও চিত্রটি নিউইয়র্ক টাইমসও দেখেছে। সেখানে দেখা যায়, হামাসের সঙ্গে থাকা হামলার নকশাচিত্র ও হামলার ধরনের ভিডিও ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার দেখে বোঝা যায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অনেক তথ্যই জানত তারা। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ইউনিটের অবস্থান, কোন সময়ে তারা একসঙ্গে জড়ো হয় এসবের তথ্য ছিল হামাসের কাছে। এ বিষয়ে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে তারা তদন্ত করবে কীভাবে হামাস এত সহজে হামলা চালাতে পারল।