ভারতে হিন্দু-মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে: প্রতিবেদন

Published: 11 May 2024

পোস্ট ডেস্ক :


ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে ভুল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতীয় বেসরকারি সংস্থা পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কোনোভাবেই ধর্মের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, ভারতে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়েই সার্বিক প্রজনন উর্বরতার হার কমেছে। তবে সামগ্রিকভাবে হিন্দু নয়, মুসলিম জনসংখ্যা কমেছে সবচেয়ে বেশি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে—১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে, ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই সময়ে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে দাবি করা হয়, ভারতে বর্তমান বিজেপি সরকার ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে লালন করার অনুকূল পরিবেশ দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের এই প্রতিবেদন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ির উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে। বিজেপির দাবি, ‘কংগ্রেসের তোষণের রাজনীতিই’ ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।

পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া জানায়, আদমশুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী—গত তিন দশক ধরে মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশে।

বেসরকারি এই সংস্থা জানায়, (মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের) এই পতন হিন্দু জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি স্পষ্ট। একই সময়সীমার মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, ভারতের ১৯৫১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আদমশুমারির যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তা নতুন নয়। পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার মতে, ভারতে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই সার্বিক প্রজনন উর্বরতার হার কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫-৬ সাল থেকে ২০১৯-২১ সাল পর্যন্ত সার্বিক প্রজনন উর্বরতা হার সবচেয়ে বেশি কমেছে মুসলমানদের মধ্যে, প্রায় ১ শতাংশ, বিপরীতে হিন্দুদের কমেছে দশমিক ৭ শতাংশ।

ভারতের এই জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি জানায়, এই প্রবণতা স্পষ্ট করে যে উর্বরতার হার বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় একই রকম। তাই এ ধরনের ব্যাখ্যা কেবল ভুল নয়, বিভ্রান্তিকর এবং ভিত্তিহীনও বটে।

এ বিষয়ে পপুলেশন ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক পুনম মুত্রেজা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে দেশে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে শঙ্কা ছড়াতে গবেষণার ফলাফল নিয়ে ‘ভুল প্রতিবেদন’ প্রকাশ করার বিষয়টি গভীরভাবে উদ্বেগজনক। এই গবেষণা মূলত বিগত ৬৫ বছরে সার্বিক সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনমিতির পরিবর্তনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। এই গবেষণাকে কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ভয় বা বৈষম্যকে উসকে দেওয়ার স্বার্থে ব্যবহার করা উচিত নয়।

পুনম মুত্রেজা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং লিঙ্গ সমতা খাতে বিনিয়োগ। আমাদের বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে নারী শিক্ষা প্রজনন হার কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাই, ধর্ম নির্বিশেষে শিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা পরিষেবা প্রদানের ওপর হস্তক্ষেপগুলো ফোকাস করা উচিত।