গাজায় ২১ হাজার শিশু নিখোঁজ
পোস্ট ডেস্ক :
হামাস-ইসরাইল সংঘাতে গত আট মাসের বেশি সময়ে গাজার প্রায় ২১ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের শিশু বিষয়ক সংস্থা সেভ দ্য চিল্ড্রেন। এক বিবৃতিতে শিশুদের নিয়ে কাজ করা ওই সংস্থাটি জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় গাজার যেসকল স্থাপনা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সেখানে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার শিশু। এছাড়া বহু শিশু ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনে শিশু নিখোঁজের যে পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সকলেই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এতে বলা হয়েছে, বৃটিশ ওই সংস্থাটি বলছে গাজায় এখন যে ভয়াবহতা চলছে তার মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করা এবং যাচাই করা প্রায় অসম্ভব। তবে নিখোঁজ হওয়া অন্তত ১৭ হাজার শিশু তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং আনুমানিক ৪ হাজার শিশু এখনও ধ্বংস হওয়া বিভিন্ন স্থাপনার নিচে আটকা পড়ে আছে। এছাড়া অনেক শিশুকে গণকবরস্থ করা হয়েছে বলেও তথ্য দিয়েছে ওই সংস্থা।
সেভ দ্য চিল্ড্রেন আরও জানিয়েছে, শিশুদের বড় একটি অংশকে জোরপূর্বক নিখোঁজ করা হয়েছে যার মধ্যে বহু শিশুকে আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। নিখোঁজ হওয়া এই শিশুরা কি অবস্থায় আছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য তাদের পরিবারের কাছে নেই।
গাজায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও চলছে ইসরাইলি গণহত্যা। জাতিসংঘের তথ্যমতে নিহতদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু। ইসরাইলকে বারবার তাদের অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিলেও তাতে কর্ণপাত করছেনা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
উল্টো তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সেখানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আল জাজিরার পৃথক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে বৈশ্বিক চাপ বাড়লেও সেখানে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু। এমনকি তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত না হওয়ার কথাও জানিয়েছেন যা গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের অবসান ঘটায়। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি একটি ‘আংশিক’ চুক্তির জন্য উন্মুক্ত যা গাজায় এখনও আটক থাকা কিছু বন্দিকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। এছাড়া নেতানিয়াহু পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তিনি এমন কোনো চুক্তিতে সম্মত হবেন না যা গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। যদিও গাজায় ইসরাইলের আক্রমনাত্মক অভিযান বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আল জাজিরার সর্বশেষ আপডেটে বলা হয়েছে, গাজার সেফ জোন আল-মাওয়াসিতে হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফার ওই স্থানে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টিতে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত অপুষ্টিতে ভোগা শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ৩১ জনে পৌঁছেছে।
গাজায় ইসরাইলের অবিরাম হামলায় আট মাসের বেশি সময়ে নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছড়িয়েছে। বর্বর এই হামলার জেরে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ বাড়লেও তাতে এতটুক দমেনি ইসরাইল। এতে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘ ইসরাইলকে তাদের অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা মানেনি তেল আবিব। এতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন ইসরাইলের কাছে কি জাতিসংঘ অসহায় হয়ে পড়েছে যে তারা জাতিসংঘের নির্দেশ অমান্য করার সাহস পেয়েছে। এক্ষেত্রে তারা ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থনকে দায়ি করেছেন।