তাকসিমকে ঘিরে দুর্নীতি চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে: স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা
বিশেষ সংবাদদাতা :
ওয়াসার সদ্য পদত্যাগ কারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানকে ঘিরে গড়ে ওঠা দুর্নীতির চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বতী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে একটার পর একটা চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। এ তথ্যগুলো, তার ছবিসহ দুর্নীতির চিত্র, তার চেহারাও মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। তার কন্ট্রাক্ট টার্মিনেট করা হয়েছে এবং সেই প্রজ্ঞাপনও হয়ে গেছে। এটাই হচ্ছে তাসকিমের বিষয়ে লেটেস্ট খবর।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, তাসকিন এ খানকে ঘিরে যে দুর্নীতির চক্র গড়ে উঠেছিল, এখন হয়তো হয় না। সেই চক্রের বিষয়ে আমাদের কি সিদ্ধান্ত সেটা আপনারা জানতে চেয়েছেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন।
তিনি বলেন, দুর্নীতির এই চক্র বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় আছে। এগুলো আমরা একটু যাচাই-বাছাই এবং খোঁজখবর নিয়ে, তারপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তাকে ঘিরে যে দুর্নীতির চক্র হয়েছিল, চক্রের যারা সক্রিয় রয়েছে, বা যারা লুকিয়ে আছে তাদের কি ব্যবস্থার মধ্যে আনা যায়, চিন্তা-ভাবনা করা হবে এবং পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দুর্নীতি বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বলেন, ফাঁকফোকর দিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে সেটা হয়ে গেছে। কিন্তু আগামীতে এমন হলে আমার নজরে নিয়ে আসবেন। আমাদের সামনে ‘টাস্ক’ অনেক বড়। অনেকদিনের জঞ্জাল জমে আছে। এটা এক-দুদিনে ঠিক হবে না। সবার সহযোগিতা থাকলে এটা ধাপে ধাপে সমাধান হবে।
হাসান আরিফ বলেন, কোনো পদক্ষেপ সঠিক হয়নি এমন বিবেচনা থাকলে সেটা আমাদের জানালে আমরা পুনরায় বিবেচনা করবো। প্রতিটি জায়গায়ই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোথায় বাজেট কত এবং কত দূর অগ্রসর হয়েছে সেগুলোতে নজরদারি করা হবে।
তিনি বলেন, যখনই আমার কাছে ফাইল নিয়ে আসা হয় (বিশেষত প্রকল্পের ফাইল) সেগুলো আমি নিজে খুঁটিনাটি দেখে এরপর সই করি। অভিযোগ আছে যে প্রকল্প হচ্ছে দুর্নীতি ও অপচয়ের একটা জায়গা। কেউ যদি এসে বলে প্রকল্পের সবকিছু ঠিক আছে স্যার, সই করে দেন; তাহলেও কিন্তু আমি সই করি না।
এ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যদি আইন অনুযায়ী কাজ করি তাহলে কিন্তু দুর্নীতি অটোমেটিক্যালি থাকবে না। আইনে আছে যে আপনি ১০০ টাকার কাজের ১০০ টাকারই কাজ করবেন। কিন্তু আমি যদি ৩০ টাকা ভাগাভাগি করে নেই, তাহলে সেখানে থাকলো মাত্র ৭০ টাকা। আইনে তো এমন বলা নেই যে ১০০ টাকা দিলে আপনি ৭০ টাকার কাজ করবেন এবং বাকি ৩০ টাকা দিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করবেন। সুতরাং আমরা যদি আইনের মধ্য থেকে কাজ করি তাহলে দুর্নীতিতে বড় একটা বাধা আসবে। আইন থেকে বিচ্যুত হলেই এটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, যেখানে একটি বড় বাজেট থাকে এবং কর্মকাণ্ড থাকে সেখানে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। পথ খুলে যায়। সে জায়গাগুলো বন্ধ করা আমাদের জরুরি প্রয়োজন। যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেগুলো আমরা দেখে ব্যবস্থা নেবো।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের কাজে গতিশীলতা আনতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে নিবিড় কো-অর্ডিনেশন প্রয়োজন। এছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গুর বিষয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে আমরা বসবো। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের যথাযথ প্রিভেনটিভ ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। মাঝখানে যেহেতু একটা বিরতি ছিল। অনেক এলাকাতেই মেয়র নেই। সিটি করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারকে (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী তিনি ব্যবস্থা নিবেন। সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গুর বিষয়ে যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে বসবো, এখানে গণমাধ্যমের বিশেষ অবদান আছে৷ সিটি করপোরেশন থেকে না হয় বিভিন্ন ডোবা-নালায় ওষুধ ছিটানো হলো, কিন্তু বাসা-বাড়ির ছাদে, ফুলের টবে যে পানি জমে তা প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা দরকার। এই সচেতনতার বাড়াতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন।