শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে : তাজুল ইসলাম
বিশেষ সংবাদদাতা :
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য নবনিযুক্ত চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা অধিকাংশ মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তির আলোকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
চিফ প্রসিকিউর বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার সব আলামত সংগ্রহ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করা হবে। এমন বিচার হবে যাতে সব পক্ষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়।
তিনি বলেন, তদন্তকালে আসামিদের গ্রেফতারের আবেদন করবে প্রসিকিউটর টিম। আগে ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষে আইনি লড়াইয়ে কোনও আইনগত জটিলতা নেই। দ্রুত ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচার আমলে সিস্টেমেটিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, গণহত্যা করেছে, তারই বিচার করতে প্রসিকিউশন টিম পুনর্গঠন করা হচ্ছে। প্রসিকিউটর টিম ক্রমান্বয়ে বাড়বে।
তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম কাজ হবে, গণহত্যার আলামত সংগ্রহ করা। যা নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে দোসররা। কারও কাছে গণহত্যার কোনো আলামত থাকলে তা ট্রাইব্যুনালকে জানানোর অনুরোধ জানান চিফ প্রসিকিউটর।
তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারের মাধ্যমে আসামিপক্ষও যেন ন্যায়বিচার পায়, সেটিও খেয়াল রাখবে প্রসিকিউশন। তিনি বলেন, তদন্তকালীন প্রয়োজন মোতাবেক গুরুতর আসামিদের গ্রেফতার চাইবে, প্রসিকিউশন। আসামিরা কেউ যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সেটি খেয়াল থাকবে।
এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হোক, আইজিপি হোক, সবাই একই পর্যায়ের আসামি বিবেচনা হবে। আগের সময়ে যেভাবে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছিল, সেরকম যেন আর না হয়, সেটিও লক্ষ্য থাকবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতের সাথে চুক্তি আছে বন্দি বিনিময়ের।
তিনি বলেন, গণহত্যার সময় গণমাধ্যমে দেখানো ফুটেজ তথ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এভিডেন্স কালেক্ট করা প্রধান চ্যালেঞ্জ। সারাদেশের আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু হবে আগে। যারা পালিয়ে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও চার প্রসিকিউটর উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন– মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম, বি এম সুলতান মাহমুদ ও আব্দুল্লাহ আল নোমান।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি বর্তমানে ভারতে আছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হাজারের বেশি নিহত হন। এই গণহত্যার বিচার মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের নামে গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। শিগগির এর বিচারকাজ পুরোদমে চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।