গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্যারিস ফ্যাস্টিবল এবং একজন মুহিবুর রহমান মুহিব
।। এম. হাসানুল হক উজ্জ্বল।।
সারা বিশে^ অবস্থানকারী সিলেটিদের একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য একটি সংগঠন গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন যুক্তরাজ্য জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও অসংখ্য সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা মুহিবুর রহমান মুহিব। উদ্দেশ্য একটিই সিলেটের বিভিন্ন দাবী দাওয়া আদায়, অবহেলিত অঞ্চলের কাঙ্খিত উন্নয়ন এবং সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সেবা করার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ক্ষেত্র থেকে শুরু করে সরকারের সাথে ভালো কর্মে অংশ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা। এ লক্ষ্যে তিনি বিশে^র বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী কমিউনিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ রকম ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। সকলের সাথে পরামর্শ করে ‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটান।
২০২৩ইং সনে লন্ডনে সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’র প্রথম সম্মেলন। সেখানে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত সিলেটি এসে যোগদান করে মুহিবুর রহমান মুহিবের সাথে একাত্ত্বতা প্রকাশ করেন। অভিজাত একটি হলে আয়োজিত সম্মেলনে যুক্তরাজ্যে শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থেকে মুহিবুর রহমান মুহিবের কর্মের প্রশংসা করেন এবং নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় দেশ ও বিদেশের কমিউনিটির জন্য কাজ করেন এমন জনবান্ধব নেতাদের।
‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ গঠনের পর সারাবিশে^ অবস্থানরত সিলেটিদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। নিন্দুকেরা সমালোচনায় মেতে উঠলেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারে নি কারণ সমাজে এখনো ভালো কর্মের প্রশংসা করার মতো লোকজন রয়েছেন। তাই অল্প দিনেই ‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
লন্ডন ফ্যাস্টিবলে ঘোষণা দেওয়া হয় চলতি বছরে ফ্রান্সে বিশাল আকারে প্যারিস ফ্যাস্টিবল করার। সেই মোতাবেক ফ্রান্সের কমিটিও কাজ শুরু করে। তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্যারিস ফ্যাস্টিবল। আমন্ত্রন পত্র প্রেরণ করা হয় বিশে^র বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে আমন্ত্রন পাঠানো হয়।
‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’র প্রেস এন্ড পাবলিসিটি সেক্রেটারী হিসেবে আমাকেও আমন্ত্রন দেওয়া হয়। সাথে সহকর্মী ও চ্যানেল এস এর সিলেট অফিস প্রধান মঈন উদ্দিন মঞ্জুও আমন্ত্রন গ্রহণ করেন।
একটু পেছনের দিকে যেতে হচ্ছে। ‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে আমন্ত্রপত্র পৌছে দেন জুন মাসে। সে সময় দেশে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায়। তাই সরকারের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে দলীয় প্রটোকলে অনেক নেতাকে আমন্ত্রন জানানো হয়। পরবর্তীতে দেশের পট-পরিবর্তনের কারণে এসব নেতারা ভিসা প্রাপ্তির পরও সেখানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।
তারপর কি মুহিবুর রহমান মুহিব থেমে থাকবেন? না তিনি নাছুড় বান্দা। অনুষ্ঠান করতেই হবে। তাই তিনি ভিন্ন ভাবে আয়োজন সাজানোর উদ্যোগ নেন এবং সঠিক সময়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। আমেরিকা থেকে সাধারন সম্পাদক ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, বাংলাদেশ থেকে আমি, মঈন উদ্দিন মঞ্জুসহ কেন্দ্রীয় কমিটির ক’জন নেতা এবং সারা বিশে^র নেতারা সেখানে পৌছান।
লন্ডন থেকে পৌছান কেয়ার টেকার সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ড: সুফিয়া রহমান, লন্ডন ব্যুরো অফ টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিল এর স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, গ্লোবাল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন’র ট্রেজারার রফিকুল হায়দার, মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ এমবিএ, চ্যানেল এস চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, এন টিভি ইউকের সিইও সাব্রিনা হোসেন, এশিয়ান ক্যাটারিং ফেডারেশন এর চেয়ারম্যান ইয়াওর খান, সিলেট ন্যাশনাল হার্ড ফান্ডেশন এর ইউকে’র সেক্রেটারি মনসুর খান, ইতালি জালালাবাদ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অলি উদ্দিন শামিম, বাংলাদেশ ক্যটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ ফয়জুল হক, সেক্রেটারী মিতু চৌধুরী, ক্রয়ডন কাউন্সিল এর সাবেক মেয়র কাউন্সিলর শেরওয়ান চৌধুরী, গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন ফ্রান্স এর প্রধান উপদেষ্টা ছালেহ আহমদ চৌধুরী, শাহ জামাল আহমেদ, জাকির হোসেন, তাইজুল ফয়েজ, মোহাম্মদ নুরুল আমিন, মোহাম্মদ হাজী কাওছার, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’র সেক্রেটারি সৈয়দ সাদেক আহমেদ, সংগঠনের সহ-সভাপতি কবি ও সাহিত্যিক আবুল কালাম আজাদ ছুটন, সহ সভাপতি সাংবাদিক মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সহ সভাপতি কাউন্সিলর ফয়জুর রহমান, সহ সভাপতি আসিকুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আবদুল অদুদ দীপক, আবুল হোসেন, সেলিম আলম আলী, সংগঠনিক সম্পাদক মিজু চৌধুরী, এম কে জামান জুয়েল, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ট্রেজারার সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল, সাংবাদিক আব্বাস উজ্জামান, সংগঠনের অফিস সেক্রেটারি মুসতাক আহমেদ, সাজানুর রাজা, মেম্বারশিপ সেক্রেটারি আক্তার আলী, ইয়ুথ ও স্পোর্টস সেক্রেটারি আলা উদ্দিন, গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন স্পেন এর সভাপতি আমিন আলী রফিক, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির রহমানসহ আরো অনেকে।
এদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ইতালি পৌছে ৩ দিন সেখানে অবস্থান করি এবং ইতালির কমিউনিটি নেতাদের সাথে মত বিনিময়ে মিলিত হয়ে আমাদের সংগঠনের এই আয়োজনের বিষয়বস্তু সকলকে অবহিত করি এবং সেখানকার কৃষ্টি কালচার দেখতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করি। এ জন্য ছোট ভাই ইতালির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামিলকে ধন্যবাদ জানাই। ২৮ তারিখ আমি আর মঈন উদ্দিন মঞ্জু প্যারিস বিমান বন্দরে পৌছালে সংগঠনের সভাপতি মুহিবুর রহমান মুহিব আমাদের অভ্যর্থনা জানান।
আমাদের ইতালি অবস্থানের পর থেকে সংগঠনের অভিভাবক যার অনুপ্রেরণায় আমাদের পথচলা সেই মহৎ ব্যক্তি মুহিবুর রহমান মুহিব খোঁজ খবর নিচ্ছেন সব সময়। এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা অনুষ্ঠান যাতে সফল না হয় সে জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে দেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্ঠা করেন কিন্তু নাছোড় বান্দা মুহিবুর রহমান মুহিব এসবে কাঁন না দিয়ে ঠান্ডা মস্তিস্কে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন এবং একটি সফল অনুষ্ঠান প্যারিসবাসীকে উপহার দিতে সক্ষম হন।
‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ এর প্যারিস কমিটির সভাপতি ফয়সল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এই আয়োজনকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন। প্যারিসে এই অনুষ্ঠান বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
২৯ অক্টোবল অনুষ্ঠান স্থলে আমাদেরকে নিজেই নিয়ে মুহিবুর রহমান মুহিব ভাই। সঠিক সময়ের মধ্যে দর্শক আর অভ্যাগত অতিথিদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। বক্তব্য, স্মৃতি চারণ আর মুহিবুর রহমান মুহিব ভাইয়ের বক্তব্যে সিলেটিদের আনুষ্ঠানে ‘সিলেটি মাত মাতইন যেন’ এই আহবানে সাড়া দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ‘আমরা হক্কল সিলেটির’ মেল বন্ধন এ রকমই হয়ে যায়।
সবশেষে একটি কথা বলতে হচ্ছে, সঠিক নেতৃত্ব পেলে একটি সংগঠন সমাজের উন্নয়নে অনেক কিছু করতে পারে। তাই নেতৃত্বকে বাঁচিয়ে না রেখে হিংসাত্মক মন মানষিকতা নিয়ে গলা টিপে হত্যার পরিকল্পনা না করে যার যার যার অবস্থান থেকে একে অপরকে সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ‘গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন’ সমাজ উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা রইল।