সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা জনগণ মেনে নেবে না

Published: 17 November 2024

পোস্ট ডেস্ক :


অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা জনগণ সহজভাবে মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বলেন, মাফিয়া সরকারের প্রায় ১৫ বছরে তৈরি করা যে জঞ্জাল তা তিন মাসে দূর করা সম্ভব না। কিন্তু তিন মাস পর সরকারের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অন্যায্য কিংবা অস্বাভাবিকও নয়। জনগণের সকল দাবি পূরণ করা হয়তো অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার পরিচালনায় যদি অদক্ষতা পরিলক্ষিত হয়, সেটাও কিন্তু জনগণ আবার সহজভাবে মেনে নেবে না। রাষ্ট্র মেরামতের কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করতে গিয়ে অগ্রাধিকারের সেটিং যদি ভুল হয় তাহলে কিন্তু জনগণের কাছে সরকারের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

গতকাল রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশনের (জেটেব) তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এই কাউন্সিলে কাউন্সিলারদের ভোটে ফখরুল আলমকে সভাপতি ও রুহুল আমিন আকন্দকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

তারেক রহমান বলেন, সরকারকে একেবারে ব্যর্থ করে দিতে যে পলাতক স্বৈরাচার ছিল, তার এবং তার দোসরা বসে নেই, সেটা দেশের ভেতরেই হোক বা দেশের বাইরে হোক, প্রশাসনের ভেতরে হোক বা বাইরে হোক, এরা কিন্তু ওত পেতে আছে যে, কীভাবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়া যায়। আমরা মনে করি, সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থা নিবিড় থাকলে তাদের ষড়যন্ত্রের ডাল-পালা বিস্তারের সুযোগ পাবে না। জনগণ যা চাইছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি সেগুলোকে এডড্রেস করে তাহলে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগটা পাবে না, তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।

তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা যদি না যায় তাহলে গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সমস্যা সমাধান আমরা যাই বলছি না কেনো কেনোটাই টেকসই হবে না। একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রথম হাতিয়ার হচ্ছে ভোট প্রয়োগের অধিকার। আজকে আপনারা (টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা) কিন্তু ভোট প্রয়োগ করে নেতা নির্বাচন করেছেন। একইভাবে জনগণ ভোট প্রয়োগের সুযোগ যদি না পায় তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকদের যে সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব সেই সম্পর্ক-অংশীদারিত্ব কিন্তু সৃষ্টি হয় না। আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। জনগণ আশা করছে যে, ইনশাআল্লাহ তারা স্বচ্ছ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে সক্ষম হবে, জনগণ নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে তাদের প্রতিনিধিদের। বিশ্বাসযোগ্য এবং সুনির্দিষ্ট আস্থা পেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে জনগণের আস্থার বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতরা হাসপাতাল থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে, এটি সমগ্র দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর দৃশ্য। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও নিরাপত্তা কেনো সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকার লিস্টে নেই বা কতো নম্বরে ছিল।

তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার যে পদক্ষেপটি, যে কারণে সমাজের প্রতিটা মানুষ যেকোনো পর্যায় যেকোনো মানুষ, প্রত্যেকটি পরিবার যে কষ্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়টাও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায়োরিটি লিস্টের মধ্যে কতো নম্বরে আছে? আমি সব সময় বলেছি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল কাজ হয়তো সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা কিন্তু আমাদের সকলের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের ব্যর্থতা। এদেরকে (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যদি ব্যর্থ করে দেয়া যায় তাহলে গণতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়া যাবে, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ যারা গণতন্ত্রকে ভালোবাসে, যারা গণতন্ত্র প্রাকটিস করতে চায় তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়া হবে। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি দেশের রাজনীতি যদি রুগ্ন হয় তাহলে কিন্তু এর রগ, অর্থনীতিও কিন্তু রুগ্ন হতে বাধ্য। স্বৈরাচারের আমলে আমরা সেটা দেখেছি। কয়েকটি মেগা প্রজেক্ট আমরা দেখেছি। সেটা কিন্তু আসলে উন্নয়নের চিত্র না। এখন অর্থনীতি শুরু করে সবকিছুর রূপ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে।

তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের আরও নতুন পণ্যের বাজার সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীর রাষ্ট্রের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। আমরা আশ্বাস দিয়ে বলতে চাই, জনগণের রায়ে বিএনপি যদি রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনায় সুযোগ পায়, বিদেশে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল ছাড়াও যেগুলো শতভাগ রপ্তানিযোগ্য পণ্য, আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে, সেগুলোর ওপর কীভাবে এলসির সুযোগ দেয়া যায়।

তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে মাফিয়া চক্র দেশকে আমদানি, পরনির্ভর এবং ঋণ করে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে অবশ্যই বের করে আনা প্রয়োজন। বের করে এনে দেশকে যেকোনোভাবে সমৃদ্ধি এবং স্বনির্ভর করা প্রয়োজন। বিএনপি’র অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যে, এই লক্ষ্যে পূরণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা। এর অংশ হিসেবে দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ। বিশেষ করে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে শ্রম শক্তি অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিও বিএনপি’র পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল সেক্টরের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে নানা রকম যড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় কারখানার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের বেশি ছিল। বর্তমানে এটা সংখ্যা কমে প্রায় ৩ হাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। আর শিল্পের বিরুদ্ধে নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এসে দেশের অর্থনীতিতে এখনো সবচেয়ে বড় অর্জন গার্মেন্টস শিল্প ও জনশক্তি রপ্তানি। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই কিন্তু বিশ্ববাজারের এই দু’টি সেক্টর যাত্রা শুরু করেছিল। তাতে এত বছরে আরও কিছু পণ্য রপ্তানি হলেও এই দু’টি সেক্টরকে অন্য কোনো সেক্টর অতিক্রম করতে পারেনি। এই দু’টি সেক্টর থেকে যে আয় তা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদার রাখছে। আর সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল শিল্প বিশ্ববাজারের সম্মানের সঙ্গেই জায়গায় করে নিয়েছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে।

কাউন্সিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের, গণতান্ত্রিক সমাজের সেই আকাঙ্ক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করতে আমাদের যে সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলো দূর করতে হবে, তার বেশিকিছু করতে গেলে সময় যত বেশি যাবে তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। আমি কথাটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাগুলো আছে, এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আমি আশা করবো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা, আমাদের নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার ব্যবস্থা এগুলো সংস্কার করেই আমাদেরকে অতিদ্রুত নির্বাচনে যাওয়াটাই হবে এদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে কল্যাণের।

জেটেবের সভাপতি ফখরুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ফরহাদ হালিম ডোনারসহ টেক্সটাইল প্রকৌশলী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।