নিজে নিজের মৃত্যূর সিদ্ধান্ত নেওয়া বড় কবিরা গুনাহ : শায়খ আব্দুল কাইয়ুম
ইস্ট লন্ডন মসজিদের জুমার খুতবায় ‘এসিস্টেড ডাইং বিল’ প্রসঙ্গ
“আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, জীবন-মৃত্যু আমার হাতে । আমি জীবনের মালিক । মৃত্যূর মালিকও আমি । মৃত্যূ কখন দেবো, সেই সিদ্ধান্ত আমিই গ্রহণ করবো । আমি মৃতু্যর সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে যদি কেউ নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নেয়, এটা হবে বড় কবিরা গুনাহ । তার জন্য রয়েছে কঠিন আজাব।”
কথাগুলো বলেছেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম ও খতিব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম । ২২ নভেম্বর শুক্রবার জুমার খুতবায় তিনি কথাগুলো বলেন । খুতবার বিষয়বস্তু ছিলো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে উত্থাপিত ‘এসিস্টেড ডাইং’ বিল । (দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থ মানুষকে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মেরে ফেলা)।
বিলটির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শায়খ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সরকার কিছু বিল নিয়ে এসেছে পার্লামেন্টে পাস করানোর জন্য । যারা অনেকদিন থেকে খুব অসুস্থ অবস্থায় আছেন, বহু কষ্টে অশান্তিতে আছেন । তারা জীবনে এতো অশান্তি কষ্ট ভোগ না করে কীভাবে তাড়াতাড়ি মরে যাবেন । মরে যাওয়ার জন্য তারা নিজেরা চাইবেন । চিকিৎসা বিভাগও তাদেরকে হেল্প করে তাড়াতাড়ি দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে । এই বিল পাসের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে । ইতোমধ্যে প্রথমদফা ভোটে এগিয়ে আছে । এখন দ্বিতীয়দফা ভোটের অপেক্ষায় আছে । যদি বিলটি পাস হয়ে যায়, তাহলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ।
তিনি বলেন, বিলটি যদি পাস হয়ে যায় তাহলে দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভুগছেন এমন মানুষ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে মারা যাওয়ার অনুমতি পেয়ে যাবেন । অনেক অসুস্থ রোগীর আত্মীয়-স্বজন তাকে এসিস্টেড ডাইং এর মাধ্যমে মেরে ফেলতে পারেন । ডিজএবল বাচ্চাদেরও মারা হতে পারে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু দেশে এই আইন রয়েছে, যা ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কিন্তু ১৮ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রেও সেটা কার্যকর করা হচ্ছে । কারণ অনেক শিশু দীর্ঘমেয়াদী রোগে যন্ত্রনাকাতর দিন কাটাচ্ছে । তার স্বজনরা মনে করেন এই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাকে মেরে ফেলা ভালো । কম কষ্টে মারা যাবে । তাছাড়া চিকিৎসাধীন ব্যক্তিকে মেরে ফেললে সরকারের অনেক অর্থও বাঁচবে।
তিনি পার্লামেন্টে এই বিলের বিপক্ষে ভোট দিতে এমপিদের কাছে চিঠি লিখতে কমিউনিটির মানুষের প্রতি আহবান জানান । চিঠিতে আপনার এমপিকে বলুন- আপনি বিলের পক্ষে হ্যা ভোট দেবেন না। এতো বড় একটি জঘন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ভোটে নির্বাচিত এমপিরা যেন পার্লামেন্টে ভোট না দেন।
তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) একটি ঘটনা বললেন । পুর্বের জামানার এক লোক আহত হয়ে গিয়েছিলো। এরপর আহত হওয়ার আঘাত সহ্য করতে না পেরে সে নিজের হাতে ছুরি নিয়ে নিজেকে হত্যা করে ফেললো। তো আল্লাহ তায়ালা তার ওপর রাগান্বিত হয়ে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে । আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষপ করবো ।
তিনি বলেন, আমরা জানি, জীবনে পরীক্ষা নিরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় । একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহ তায়ালা ভালোমন্দ পরীক্ষা করে থাকেন । উভয় পরীক্ষায় আমাদের পাস করতে হয়।
দুঃখ মসিবত দিয়ে তিনি পরীক্ষা করে থাকেন । শারিরীক অসুস্থতা হতে পারে । অর্থনৈতিক বিপর্যয় চলে আসতে পারে । বড় ধরনের শোক নিজেকে এফেক্ট করতে পারে । আল্লাহ তায়ালা স্বাভাবিক মৃত্যূ দেওয়ার আগে কোনো অবস্থায় আত্মহত্যা করা, নিজের জীবনকে শেষ করে দেওয়া, অনেক বড় কবিরা গুনাহ।
এই কবিরা গুনাহের দিকে না গিয়ে যদি সবর করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা বড় পুরস্কার দেবেন। ঈমানের একটি বড় লক্ষন হলো আল্লাহ তায়ালার কদরের ফায়সালার ওপর সবর করা । কষ্ট হলেও সবরের সাথে সেটা মেনটেইন করা । উন্নতির জন্য, চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করা, কিন্তু এক পর্যায়ে যদি উন্নতি নাও হয়, অবনতির দিকে যায়, এরপরও, নিজে নিজের জীবনকে শেষ করার কোনো উদ্যোগ নেবো না । এটাই হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার তাকদীরের ফয়সালার ওপর সন্তুষ্ট থাকা।