পার্লামেন্টে অভিশংসিত ফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট

Published: 6 February 2025

পোস্ট ডেস্ক :


পার্লামেন্টে এমপিদের ভোটে অভিশংসিত হয়েছেন ফিলিপাইনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে। কিন্তু এতে তাকে এখনই ক্ষমতা হারাতে হচ্ছে না। পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়ার পর বিষয়টি পাঠানো হবে সিনেটে। সেখানে ২৪ সদস্যের সিনেট শুনানি করবে। যদি তাতে দোষী প্রমাণিত হন সারা, তখনই তিনি অভিশংসিত হবেন। হারাবেন ক্ষমতা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটি দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সারা দুতের্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রকে হত্যার হুমকি সহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তার দাবি এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অনলাইন বিবিসি বলছে, ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ আছে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে সরকারি তহবিলের লাখ লাখ ডলারের অপব্যবহার এবং প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ জুনিয়রকে হত্যার হুমকি অন্যতম।
দেশটির পার্লামেন্টে সদস্য সংখ্যা ৩০৬। এর মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন মোট ২১৫ জন সদস্য। এই প্রস্তাবটি পাস হওয়ার জন্য পার্লামেন্ট সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি এমপি ভোট দিয়েছেন প্রস্তাবের পক্ষে। এর ফলে পার্লামেন্টে তিনি অভিশংসিত হলেও তার পদ হারাবেন না। তবে সিনেটে অভিশংসিত হলে ফিলিপাইনের ইতিহাসে সারা দুতার্তেই হবেন এমন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সিনেট কবে এই রায় ঘোষণা করবে, তার তারিখ বা সময়সূচি প্রকাশ করা হয়নি। জানানো হয়নি কবে সিনেটে শুনানি শুরু হবে তাও। তিনি অভিশংসিত হলে কার্যত প্রেসিডেন্ট পদে নিষিদ্ধ হবেন। সরকারি পদের জন্য স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হবেন। দেশটিতে এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আগামী মে’তে মধ্যমেয়াদি নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনকে দুতের্তে বনাম প্রেসিডেন্ট মার্কোসের মধ্যে একটি গণভোট হিসেবে দেখা হবে। সারা দুতের্তের বড় ভাই পাওলো দুতের্তে বলেছেন, সরকার একটি রাজনৈতিক বিচার করছে- বিষয়টি পরিষ্কার। ওদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কোসের একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল সারা দুতের্তে’কে। ২০২৮ সালে সেখানে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য অযোগ্য মার্কোস।
এদিকে এমন আশ্চর্যজনক ঘটনাকে মার্কোসের সঙ্গে দুতের্তের বিবাদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছু জানাননি দুতের্তে। উল্লেখ্য, তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্র্রিগো দুতের্তের কন্যা। তাকে মার্কোসের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফিলিপাইনের দুই রাজবংশের সদস্য দুতের্তে ও মার্কোস ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে মার্কোসের থেকে সামান্য এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তার রানিংমেট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গবেষকদের মতে, এই কারণেই তারা ভূমিধস জয় পান। তবে এরপর থেকে তাদের জোট ভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুসরণ করার বিষয়টি উন্মোচন করতে থাকে। এ ছাড়া কূটনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টে তারা ভিন্নমত প্রদর্শন করতে থাকেন। সারা দুতের্তে ভীষণভাবে চীনপন্থি। কিন্তু দেশটির সেই অবস্থানকে উল্টে দেন মার্কোস। তিনি সমর্থন দেন যুক্তরাষ্ট্রকে।
ওদিকে সারা দুতের্তেকে অভিশংসন করা নিয়ে কোনোই মন্তব্য করেননি মার্কোস। নভেম্বরে তিনি বলেছিলেন, তাকে অভিশংসিত করাটা এমপিদের জন্য হবে সময়ের অপচয়। তাদের সামনে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। ফার্দিনান্দ মার্কোস সিনিয়রের স্বৈরতন্ত্রের ইতি ঘটা এবং ১৯৮৬ সালে দেশটিতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় থেকে সেখানে একজন মাত্র ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছেন। তিনি হলেন জোসেফ এস্ত্রাদা। ২০০০ সালে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে অভিশংসিত করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে ভয়াবহ এক বিদ্রোহ দেখা দেয়। তাতে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। ফলে কোনো রকম বিচার ছাড়াই শেষ হয় তার বিচার কার্যক্রম। তবে একটিমাত্র অভিশংসনের রায় হয়েছে। তিনি হলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি রেতনো কোরোনা। ২০১২ সালে তিনি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এস্ত্রাদা ও কোরোনা উভয়েই উচ্চমাত্রায় রাজনীতিকরণ এবং বিভাজিত অবস্থায় অভিশংসিত হন।