মহাবিশ্ব হয়তো ধ্বংসের প্রান্তে রয়েছে
পোস্ট ডেস্ক :
মহাবিশ্ব বিস্ফোরিত হতে থাকা নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর খেয়ে ফেলছে এমন কিছু, অন্ধকার অস্তিত্ব এবং শক্তিতে পূর্ণ, যা বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। সাধারণ মানুষের কাছে এটি একটি বিশৃঙ্খল স্থান বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্ব আসলে বেশ স্থিতিশীল। ভ্যাকুম বা ‘শূন্য স্থান’ হিসাবে অভিহিত এই স্থিতিশীলতাই পদার্থবিদ্যার সামঞ্জস্যপূর্ণ নিয়ম তৈরি করতে সাহায্য করে।
তবে, কুয়ান্টাম ক্ষেত্র অধ্যয়নকারী বিজ্ঞানীরা চিন্তিত যে, এর ক্ষেত্রগুলির মধ্যে কোনও একটি নতুন এক শক্তি অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা এটিকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই অস্থিতিশীলতাকে ফল্স ভ্যাকুম ডিকে, বা অপ্রকৃত শূন্যস্থানের ক্ষয়প্রাপ্তি বলা হয়।
অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক পিটার ওনিসি, পিএইচডি বলেছেন, ‘এটি এমন একটি টাইফুনের মতো কাজ করতে পারে, এই মহাবিশ্বকে চুরমার বা অকেজো করে ফেলবে। এমনকি, পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলিও বদলে যেতে পারে।’
যেকোনো মহাজাগতিক হুমকি বোঝার জন্য কুয়ান্টাম ক্ষেত্র অপরিহার্য। এই অদৃশ্য ক্ষেত্র বোঝার সবচেয়ে সহজ উপায় হল আমাদের কাছে খুব পরিচিত তড়িৎ চৌম্বক ক্ষেত্র। এটি দুই বার শক্তি সম্পন্ন চুম্বককে তরঙ্গ সৃষ্টি করার, আমাদের যন্ত্রগুলিল মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করার এবং এমনকি সূর্যালোকের মতো মিথস্ক্রিয়ার জন্য দায়ী। খালি চোখে অদৃশ্য হলেও, কুয়ান্টাম বলয়ের শক্তি তরঙ্গগুলিও আমাদের সহ মহাবিশ্বের সবকিছুর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে।
কুয়ান্টাম রাজ্যে ট্রু ভ্যাকুম অবস্থা বা প্রকৃত শূন্যস্থানে থাকতে হলে, এই ক্ষেত্রগুলিকে তাদের সর্বনিম্ন শক্তি অবস্থায় থাকতে হয়ে। কিন্তু এর হিগস ক্ষেত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যা সাধারণত সমস্ত কণার ভর শক্তির দায়িত্বে থাকে, কিছু বিজ্ঞানীকে এই তত্ত্বেও দিকে পরিচালিত করেছে যে, হিগ্স স্থিতিশীল দেখালেও, এটি আসলে একটি অপ্রকৃত বা অস্থায়ী শূন্যতায় অবস্থান করতে পারে, আরও কম শক্তি অবস্থায় প্রবেশের অপেক্ষায়।
একটি ট্রু ভ্যাকুম অবস্থায় একটি ব্যবস্থার সর্বনিম্ন শক্তি অবস্থা। এই অবস্থায়, ব্যবস্থাটি স্থিতিশীল থাকে এবং এমন কোনও নিম্ন শক্তি অবস্থা নেই, যেখানে এটি স্থানান্তরিত হতে। একটি প্রকৃত শূন্যস্থানে, সমস্ত ভৌত ক্ষেত্র তাদের সর্বনিম্ন শক্তি বিন্যাসে স্থির হয়ে যায় এবং কোনও ওঠানামা বা বিশৃঙ্খলা নিম্ন শক্তি অবস্থায় রূপান্তরের দিকে পরিচালিত করবে না।
অন্যদিকে, একটি ফল্স ভ্যাকুম অবস্থা হল সম্ভাব্য শক্তির একটি স্থানীয় সর্বনিম অবস্থা, কিন্তু পরম সর্বনিম্ন নয়। এর অর্থ হল, যদিও শুক্ত ব্যবস্থাটি ছোটখাটো বিঘেœর বিরুদ্ধে স্থিতিশীল থাকে, তবুও এমন কিছু নিম্ন শক্তি অবস্থা রয়েছে যেখানে এটি রূপান্তরিত হতে পারে।
যদি ব্যবস্থাটি একটি ট্রু ভ্যাকুম অবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে (প্রায়শই কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে), তবে এটি মহাবিশ্বের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলিতে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারে, যেমন মহাজাগতিক স্ফীতির সাথে যুক্ত দ্রুত প্রসারণ।
অপ্রকৃত শূন্যতার ধারণাটি মহাজাগতিক তত্ত্বে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, বিশেষ করে মহাজাগতিক স্ফীতির তত্ত্বগুলিতে, যেখানে মহাবিশ্ব একটি অপ্রকৃত শূন্য অবস্থা থেকে একটি প্রকৃত শূন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়, যার ফলে এর দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছিল।
কুয়ান্টাম ক্ষেত্রগুলি যেকোনো মূল্যে তাদের সর্বনিম্ন শক্তির অবস্থায় পৌঁছাতে বাধ্য। এবং সমস্যা হল, যদি এটি সত্যিই একটি অপ্রকৃত শূন্য অবস্থায় থাকে, তাহলে এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে এটি একদিন কুয়ান্টাম টানেলিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে এই নতুন সত্যিকারের ভ্যাকুয়ামে স্থানান্তরিত করতে পারবে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কণাগুলি এমন বাধা অতিক্রম করতে পারে, যা তারা সাধারণত অতিক্রম করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এই ক্রিয়াটি কেবল হিগস ক্ষেত্রকেই রূপান্তরিত করবে না, বরং মহাবিশ্বের অন্তর্নিহিত পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নকে একটি আমূল পুনর্গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ডেভিড টং, পিএইচডি. বলেছেন, ‘ইলেকট্রন এবং কুয়ার্কের ভর হঠাৎ করে সহ¯্র কোটি গুণ বড় হয়ে যাবে এবং আমার সন্দেহ যে হাইড্রোজেনের থেকেও ক্ষুদ্রতম বেশিরভাগ পরমাণু বিলীন হয়ে যাবে। পারমাণবিক বিক্রিয়া আর কাজ করবে না, তাই নক্ষত্রগুলি জ্বলতে ব্যর্থ হবে। রসায়ন ধ্বংস হয়ে যাবে, যার অর্থ জীবনের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। মহাবিশ্ব আর আজকের মতো আশ্চর্যজনক প্রাণবন্ত স্থান থাকবে না।’
পদার্থবিদরা এখনও অত্যন্ত তাত্ত্বিকভাবে সতর্ক করে বলেন, এই সমস্ত বিপর্যয় মহাজাগতিক বুদবুদ নামক কিছুর ফলে ঘটবে। মূলত, এই বুদবুদটি মহাবিশ্বের একটি উৎস থেকে সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে প্রকৃত শূন্যতার একটি সম্প্রসারণ। কিন্তু, যেহেতু এই ধারণাগুলি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি, পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষার উপর নয়, তাই বিজ্ঞানীরা ঠিক জানেন না যে, এই বুদবুদগুলি কবে তৈরি হবে বা তাদের বৈশিষ্ট্য কী হতে পারে।