প্রবাসী অগ্রদূতদের হাত ধরে বাংলাদেশ হতে পারে এক অর্থনৈতিক পরাশক্তি

Published: 17 April 2025

 

স্বাগতম। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত নতুন বাংলাদেশ সরকার একঝাঁক অসাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশিকে লাল গালিচা ঢেলে নিয়ে এলেন ঢাকায় । এই কারিগররা ইতোমধ্যেই দেশে এসে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এবং জাতির দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছেন এক নতুন উচ্চতায় বিশ্বদরবারে। তাঁরা প্রচলিত সীমানা ভেঙে এগিয়ে চলেছেন এমন এক ভবিষ্যতের দিকে, যেখানে বাংলাদেশ পরিণত হতে পারে একটি অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে।

 

এই গৌরবোজ্জ্বল প্রতিভাদের একজন হলেন তরুণ উদ্যোক্তা আশিক চৌধুরী, যিনি টেকসই জ্বালানি খাতে তাঁর উদ্ভাবনী চিন্তার জন্য ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছেন। চৌধুরীর উদ্যোগ এমন এক প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে, যা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে আমূল পরিবর্তন করছে—দুস্থ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ। তাঁর কাজ শুধুমাত্র পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করেনি, বরং সৃষ্টি করেছে স্থানীয় মানুষের জন্য হাজারো কর্মসংস্থান।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটে, যেখানে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক রূপরেখা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়, আশিক চৌধুরী সবাইকে মুগ্ধ করেন তাঁর সাহসী ও দূরদর্শী বক্তব্য দিয়ে। ড. ইউনূস নিজেও আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন—কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান, তরুণ ও উদ্যমী শ্রমশক্তি, এবং উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশকে সম্ভাবনার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর উদ্দীপ্ত বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস এবং বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে কল্পনা করার সাহস শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে।

 

ড. ইউনূসের দলে আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন প্রফেসর লুৎফী সিদ্দিকী, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকসের এমেরিটাস গভর্নর এবং বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক কৌশলের অন্যতম রূপকার। আমি এখনো মনে করতে পারি, যখন তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বাংলা মিরর পত্রিকায় ২০০২ সালে —যা ছিল ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জন্য প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্র এবং আমারই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। আমাকে দেওয়া একটি ফিচারের জন্য সাক্ষাৎকার চলাকালীন তাঁর “বিপ্লবী চিন্তার ঝলক” আমাদের টিমকে মুগ্ধ করেছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন —“আমি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে চাই”—তাঁর এই ঘোষণা, দূরদৃষ্টি এক অপ্রতিরোধ্য আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।

 

এই অগ্রদূতেরা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের কাহিনি নন—তাঁরা নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি নেতৃত্বের প্রতীক, যারা দেশের অর্থনৈতিক বর্ণনাকে নতুন করে লিখছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ। জনগণের দৃঢ় সমর্থন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাহসী পদক্ষেপে বাংলাদেশ পৌঁছাতে পারে এমন এক উচ্চতায়, যা এতদিন ছিল কেবল স্বপ্নের জগতে।

 

এই বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি (NRB) পথিকৃৎদের কাহিনি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। তাঁদের উদ্ভাবনী মনোভাব, অটল সংকল্প এবং মাতৃভূমির প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা—বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির বলিষ্ঠ এক শক্তিতে পরিণত করতে যাচ্ছে।

 

লুৎফে সিদ্দিকী: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের অনুঘটক

লুৎফে সিদ্দিকী—একটি নাম, যার পেশাগত জীবনচিত্র মুগ্ধতার উদ্রেক করে। তিনি LSE IDEAS-এ Visiting Professor in Practice এবং LSE Inclusion Initiative (TII)-এ সহ-গবেষক হিসেবে যুক্ত। তিনি পূর্বে UBS ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে ফরেন এক্সচেঞ্জ, রেটস ও ক্রেডিট শাখার গ্লোবাল হেড অব ইমার্জিং মার্কেটস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে তিনি UBS নলেজ নেটওয়ার্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার আগে, তিনি বার্কলেস ব্যাংকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ব্যবসা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

 

২০১২ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তাঁকে Young Global Leader হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তিনি Davos এবং Global Future Councils-এ নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছেন।

 

বর্তমানে তাঁর ওপর দায়িত্ব এসেছে বিশ্বব্যাপী নীতিনির্ধারক, শিল্পপতি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত করা। তাঁর আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক এবং একাডেমিক ও পেশাগত খ্যাতি বিদেশি মূলধন ও প্রযুক্তিকে বাংলাদেশের দিকে আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।

 

ফিনটেক, ডিজিটাল অর্থনীতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সিদ্দিকীর জ্ঞান বাংলাদেশের নীতি প্রণয়নে দিকনির্দেশক হতে পারে। তাঁর গবেষণাভিত্তিক পরামর্শ এবং বাস্তব সম্মত সমাধানগুলো বাংলাদেশের বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই নীতিগত কাঠামো নির্মাণে সাহায্য করতে পারে, যা দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ উন্মোচন করবে।

 

এছাড়াও, তাঁর একাডেমিক প্রভাব বাংলাদেশের তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে। LSE এবং দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আমাদের মানবসম্পদ দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত।

 

*আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে ইহার প্রকৃত রূপে প্রতিষ্টিত করতে যা নিঃসন্দহে বিশ্বসেরা, নৈতিকতায় দীপ্ত, মূল্যবোধে পরিপুষ্ট এবং অর্থনৈতিকভাবে অপ্রতিরোধ্য তাহলে লুৎফী সিদ্দিকী ও আশিক চৌধুরীর মতো প্রতিভাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন আছে, যারা এই জাতির অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে উন্মোচন করে একে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সার্থকভাবে দাঁড় করাতে পারেন। এটা আমরা সকলেই স্বীকার করব।*

 

কিন্তু প্রকৃত মেধাবানরা কখনও ‘মেডাম আর স্যারদের’ বজে কাজ করেন না। আর না বজলে মেডাম আর স্যারেরা মেধা চিনেন না। আমরা যারা দলীয় রাজনীতি করি এ সত্যিটা ক’জনে স্বীকার করি ?