জীবনে মরণে তোমায় কি ভুলিতে পারি?
– শফি আহমেদ
নিমিষের তরে নিশ্চিত মরণ যে মরে,
তুলে দিলো মৃত্যুহীন অমর-মালা তারে।
এক চুমুকেই পিয়ে নিল সে অমরা —
ওই পরম অনন্য, অবিনাশী অমৃত সুধা।
কাল-মহাকাল, সর্বকালের সব ভিন্ন পরতে,
একযোগে উঠিল নেচে চিরঞ্জীবী ছন্দে।
বাজিল বীণা ওই মরে-ও-অমর কঙ্কালে —
সৃজনরাত্রির প্রথম সুরে।
কালের জমাট হিয়া,
ভাসায় ডেউয়ের ভেলা।
অতল সাগরের নিভৃত হৃদয়বিন্দু,
পরানে বহে নীলিমার নীল-ময়ূরী
ওই অন্তরতম জলবিন্দু
এলো শতছন্দে — গীতোচ্ছ্বাসে, সুবিন্দু।
সিন্ধুপুরে জলসা-ঘরের সুরপরী,
অধরে ধরিল মহাসিন্ধুর বাঁশরী —
সে যে প্রথম ধ্বনিই, সুরেলা সয়ম্ভরী!
ঐ যে বিন্দু জলে ভাসে সাগর, ভাসে পূর্ণ শশী,
গহন তলানিতে নীলপদ্ম ছায়া।
নীলে নীলাকার নীলাম্বরী —
কার সাধ্য ছোঁবে ওই অস্পরা কুমারী ,
ওই চির-অধরা, জলপরী।
সাগর-দিঘল তাহুরা-সরাব পানে,
ব্যাকুল সব পিয়াসী মহারথী —
তুমি এলে, অশীম পারের আজব সাকি,
এক চুমুকে ঢেলে দিলে — মরনে অমৃত মাধুরী।
সূরু হতে সারা, সব এলো নয়ন জুড়ি,
তোমার হাতেই এলো কবর-খোঁড়া কুড়ি।
এক মুঠো আলগা মাটি —
প্রাণ হয়ে উঠলে এই মরণাপন্ন পরানে তুমি,
তবু দিলে না তাকে — হতে সলিল সমাধি।
জীবনে মরণে, তোমায় কি ভুলিতে পারি?