ভুল সংশোধনে নিবন্ধনে আবেদন করা দলগুলো সময় পাবে ১৫ দিন

Published: 11 July 2025

পোস্ট ডেস্ক :


আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে দুই দফায় দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে ১৪৪ টি দল। নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত দলগুলোর দেয়া তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭জন কর্মকর্তাদের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক যাচাই বাছাইয়ের কাজ শেষ হলে দলগুলোর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কার্যালয় তদন্ত করবে কর্মকর্তারা। দলের গঠনতন্ত্রে ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে অভিযোগ থাকলে তা সংশোধনের জন্য বাড়তি সময় দিবে ইসি। কিন্তু দলগুলোর দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে তদন্তে নামলে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দুই সংখ্যার ঘরে আসতে পারে বলেও জানান তারা। আবেদনকৃত দলগুলোর অনেকে শর্তপূরণ না করে আবেদন করেছে, তাদের দাবী সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দলের গঠনতন্ত্র শেষ না করেও অনেকে আবেদন করেছে। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসিতে দেখা দেয় প্রতীক সংকট তবে নিবন্ধনের শর্তপূরণ না করে আবেদন করলে নিবন্ধন পাবে না দলগুলো, তাদের দেয়া তথ্য বিশদভাবে যাচাই বাছাই করছে কর্মকর্তারা। ফলে নিবন্ধনের পর ইসির প্রতীক নিয়ে সংকট হবে না জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০, তাদের জন্য প্রতীক বরাদ্দ রাখার পর বাকি ১৯টি প্রতীক বেশী রাখা হয়েছিল। নতুন দলের আবেদন সংখ্যার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে কমিশন থেকে ৪৬টি নতুন প্রতীক খুজে বের করে তা আইনমন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে।
এদিকে ২০১৭ সাল থেকে নিবন্ধনের আবেদন করে আসছে কয়েকটি দল, ২০২২ সালেও কয়েকটি দল আবেদন করেছে। কিন্তু তাদের নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না ইসির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলছেন দলগুলো। ইসি কর্মকর্তাদের এমন আচরণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে মৌলিক বাংলা নামের রাজনৈতিক দল। তবে আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে কেউ তাদের দলের প্যাডে আবেদন করে এবং কয়েকটি দল একপাতায় আবেদন করে। আবেদন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় ইসি থেকে চিঠি দিয়ে কয়েকটি দলকে ডাকা হলেও সেখানেও হয়েছে স্বজনপ্রীতি। রাজধানীর ঢাকায় কার্যালয় হলেও তারা ইসি থেকে চিঠি পায়নি কিন্তু অন্যজেলা শহরে কার্যালয় দেখিয়ে তারা ইসির সাথে সাক্ষাৎ করেছে এমনও অভিযোগ করেছে দলগুলো। তারা বলছে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের আত্মীয় বা এলাকার স্বজনপ্রীতি থেকে অনেকে ইসিতে ডাক পেয়েছে আরও বহুদল দীর্ঘদিন আবেদন করেও তাদের ডাকা হয়নি। গত ৯ জুলাই ইসি সচিবালয় থেকে একটি আদেশ জারি করা হয় যেখানে বলা হয় নতুন দলের আবেদনে তাদের কাগজপত্রে ছোট ভুলত্রুটি সমাধান করার জন্য ১৫ দিন সময় দেবে ইসি। আবেদনে ভুলত্রুটি কেমন হতে পারে এ সর্ম্পকে ইসি কর্মকর্তারা জানান, দল নিবন্ধনে ইসিতে জমা দেওয়া আবেদনে কোনো ধরনের অসঙ্গতি, নাম-পদবীর বানানসহ ছোটখাট তথ্যের ঘাটতিও থাকতে পারে। এ ধরনের ত্রুটিগুলো ঠিক করে আবার কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা দলগুলোকে ১৫ দিন সময় দিয়ে চিঠি দেওয়া হবে। তারপর চূড়ান্ত যাচাইয়ে টিকে থাকা দলগুলোর বিষয়ে গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা, কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে অফিসসহ নিবন্ধন শর্তগুলোর দলিলাদি ঠিক আছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। গত ২২ জুন ছিল রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদনের সময় শেষ হয়েছে। এদিন পর্যন্ত ১৪৪টি দলের কমিশনে জমা পড়েছিল। যাচাই বাছাইকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করবেন। এরপর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর তদন্ত করা হবে। তদন্তে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলো নিয়ে দাবি-আপত্তি আহ্বান করবে ইসি। আপত্তি থাকলে শুনানি করে নিষ্পত্তি হবে। আর আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে।
আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলগুলোর একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি, কার্যালয় ও ২০০ ভোটার সমর্থক থাকতে হয়। এছাড়া পূর্বের কোনো নির্বাচনে দলটির নির্বাচিত কোনো সদস্য থাকলে ও কোনো নির্বাচনে কমপক্ষে ৫ শতাংশ ভোট পেলে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও অন্যান্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।
গত ১০ জুলাই ইসি জানায় নির্বাচন কমিশনের তফসিলে নতুন করে আরও যুক্ত করা হচ্ছে ৪৬টি প্রতীক। বর্তমানে ইসির তফসিলে ৬৯টি প্রতীক রয়েছে। নতুন করে ৪৬টি প্রতীক যুক্ত হলে ইসির প্রতীক সংখ্যা দাঁড়াবে ১১৫টি। এই তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচন কমিশনের তফসিলে প্রতীক যুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কমিটি মোট ১৫০টি প্রতীক চূড়ান্ত করে। কিন্তু কমিশন এই ১৫০টির মধ্যে কাটছাঁট করে ১১৫টি প্রতীক তফসিলে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত দেয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১৫টি প্রতীক আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এখান থেকে প্রতীক বাতিল বা নতুন প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করতে নির্বাচন কমিশনকে সুপারিশ জানাতে পারে।
তারা আরও জানান, দলের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়ার কার্যক্রমও হাতে নেওয়া হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে দলের সংখ্যা বাড়লে যাতে প্রতীক কম না পড়ে তাই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করতে যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এতে শাপলা প্রতীক রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
৪৬টিসহ ইসির প্রতীকের তফসিল দাঁড়াচ্ছে ১১৫টি। তাদের মধ্যে হলো আপেল, আনারস, কোদাল, খাট, টেবিল ঘড়ি, ফ্রিজ, মোড়া, ট্রাক, বক, মোরগ, আম, খেজুর গাছ, টেলিফোন, বাঘ, রকেট, আলমিরা, গরুর গাড়ী, টেলিভিশন, বই, রিক্সা, ঈগল, গাভী, ডাব, বটগাছ, লাউ, উটপাখি, গামছা, ঢেঁকি, বাঁশি, লিচু, উদীয়মান সূর্য, গোলাপ ফুল, তবলা, বেঞ্চ, লাঙ্গল, একতারা, ঘণ্টা, তরমুজ, বেগুন, শঙ্খ, কাঁচি, ঘুড়ি, তারা, বাইসাইকেল, সোনালী আঁশ, কবুতর, কলম, ঘোড়া, থালা, বালতি, সেলাই মেশিন, চাকা, দাঁড়িপাল্লা, বেলুন, সোফা, কলস, চার্জার লাইট, দালান, বৈদ্যুতিক পাখা, সিংহ, কলার ছড়ি, চাবি, দেওয়াল ঘড়ি, মই, কাঁঠাল, চিংড়ি, দোয়াত কলম, মগ, স্যুটকেস, হরিণ, কাঁপ-পিরিচ, চেয়ার, দোলনা, মাইক, হাত (পাঞ্জা), কাস্তে, চশমা, ধানের শীষ, মটরগাড়ি (কার), হাতঘড়ি, কেটলি, ছড়ি, নোঙ্গর, মশাল, হাতপাখা, কুমির, ছাতা, নৌকা, ময়ূর, হাঁস, কম্পিউটার, জগ, প্রজাপতি, মাছ, কলা, কুড়াল, জাহাজ, ফুটবল, মাথাল, টিউবওয়েল, ফুলকপি, মিনার, কুলা, টিফিন ক্যারিয়ার, ফুলের টব, মোমবাতি, কুঁড়ে ঘর, টেবিল, ফুলের মালা, মোবাইল ফোন, হাতি, হাতুড়ী, হারিকেন, হক্কা, হেলিকপ্টার।