ফ্রান্স-ব্রিটেন অভিবাসন চুক্তি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র আপত্তি

Published: 13 July 2025

পোস্ট ডেস্ক :


সম্প্রতি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি নতুন অভিবাসন চুক্তি ঘিরে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের সরকার অভিবাসী সংকট সামাল দিতে ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে একটি বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করতে যাচ্ছে, যেখানে একজন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে এবং অপরজনকে গ্রহণ করা হবে। যদিও জাতিসংঘ এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটিকে অমানবিক বলে বর্ণনা করেছেন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছে। এর অংশ হিসেবে ফ্রান্সের সঙ্গে একটি অভিবাসী বিনিময় পরিকল্পনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে ঢুকে পড়া একজন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে এবং বিনিময়ে ফ্রান্সে থাকা একজন অভিবাসীকে গ্রহণ করবে যুক্তরাজ্য। তবে এজন্য অনলাইনে আবেদন ও যথাযথ কারণ দেখাতে হবে। প্রকল্পটি এখনও ইউরোপীয় কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এই চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে বিপজ্জনক অভিবাসন পথের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু ফরাসি ও ব্রিটিশ মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে। প্রভাবশালী এনজিও ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা শুধু ‘হাস্যকর’ নয় বরং ‘বিপজ্জনক’। তারা দুই দেশের সরকারকে নিরাপদ এবং বৈধ অভিবাসনপথ উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

ফরাসি সংগঠন ইতুপিয়া ৫৬ বলেছে, “এটি মূলত মানবপাচার। অভিবাসীদের কার্ডের মতো বিনিময় করা হচ্ছে।” কালেতে অভিবাসীদের সহায়তাকারী সংগঠন উবেরজ দে মিগ্রঁ-এর এক সমন্বয়ক বলেন, “এরা এমন মানুষ যারা হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এসেছে। এই চুক্তি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।”

 

এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও ক্ষোভ রয়েছে। ব্রিটিশ ডানপন্থি নেতা নাইজেল ফারাজ এই উদ্যোগকে “অসম্মানজনক” বলে অভিহিত করেছেন এবং দাবি করেছেন, “আমরা যেন আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়ে গেছি।” ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের প্রধান কেমি ব্যাডেনক প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি অনুপাত হয় ১৭ জনকে ঢুকতে দিয়ে ১ জনকে ফেরত পাঠানো, তাহলে তা কার্যকর নয়।”

 

ফ্রান্সের কাল শহরের মেয়র নাতাশা বুশে অভিযোগ করেন, “স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” উত্তর ফ্রান্স রিজিওনের প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের বের্ত্রঁ বলেন, “এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের জন্য লাভজনক, আর ফ্রান্সের জন্য ক্ষতির।”

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে কিয়ার স্টারমার ক্ষমতায় আসার পর মানবপাচার দমনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ৯০ মিলিয়ন ইউরোর তহবিল গঠন করেছেন এবং সার্বিয়া, কসোভো ও ইরাকসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও ইংলিশ চ্যানেলে বিপজ্জনক নৌকাযাত্রা থামছে না। ইতোমধ্যেই এ পথে পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৪ সালে কমপক্ষে ৭৮ জন এবং চলতি বছর আরও অন্তত ১৭ জন মারা গেছেন। তথ্যসূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস