১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের

Published: 17 July 2025

পোস্ট ডেস্ক :


যুক্তরাজ্য সরকার বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে, তারা ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সে ভোটার নির্ধারণকারী দেশগুলোর একটি হয়ে উঠবে ব্রিটেন।

লেবার পার্টির একটি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। ক্ষমতায় আসার আগে দলটি এই পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

এটি এমন কিছু পরিকল্পিত গণতান্ত্রিক সংস্কারের একটি অংশ, যেগুলোর লক্ষ্য অংশগ্রহণ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় ‘সংকটে থাকা’ গণতন্ত্রকে চাঙ্গা করা।
তবে ভোটার হতে নাগরিকদের বয়সসীমা কমানোর এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই পদক্ষেপ লেবার পার্টির স্বার্থে নেওয়া, কারণ নবীন ভোটারদের বড় অংশই মধ্য ডানপন্থী দলগুলোর চেয়ে মধ্য বামপন্থী লেবার পার্টিকে সমর্থন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, ১৬ ও ১৭ বছর বয়সীদের ভোটাধিকার পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ তারা কাজ করতে পারে, তারা কর দেয়, অর্থাৎ তারা অবদান রাখে। আর আমি মনে করি, যারা অবদান রাখে, তাদের সুযোগ থাকা উচিত সেই অর্থ কোথায় ব্যয় হবে বা সরকার কোন পথে এগোবে, তা নির্ধারণে মত দেওয়ার।’
এই পরিবর্তন কার্যকর করতে সরকারকে সংসদে আইন প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে লেবার পার্টির ভালো সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

এদিকে বিশ্বে খুব কম দেশই রয়েছে, যারা জাতীয় নির্বাচনে ১৬ বছর বয়সীদের ভোটাধিকার দেয়।

এই তালিকায় রয়েছে ২০০৭ সালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া অস্ট্রিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নে তারাই প্রথম এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পাশাপাশি আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইকুয়েডর ও কিউবাও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লেবার মন্ত্রীরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ‘গণতন্ত্রকে আধুনিকীকরণ’ ও ভোটার অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া, পাশাপাশি স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের আঞ্চলিক সংসদের নির্বাচনে যেহেতু ইতিমধ্যে ১৬ বছর বয়সীরা ভোট দিতে পারে, সেটির সঙ্গেও সামঞ্জস্য রাখতে চান তারা।

অন্যান্য প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় ভোটার নিবন্ধন চালু করা, যা আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় রয়েছে এবং ব্যাংক কার্ডকে ভোটার আইডি হিসেবে গ্রহণযোগ্য করা।

এই পরিকল্পনা আগের কনজারভেটিভ সরকারের করা আইনের পরিবর্তন হিসেবে আসছে, যেখানে ভোটারদের ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র দেখানোকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সেই আইনের কারণে গত বছরের নির্বাচনে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ ভোট দিতে পারেনি।

থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক হ্যারি কুইলটার-পিনার বলেন, এটি ১৯৬৯ সালের পর ব্রিটেনের নির্বাচনীব্যবস্থায় ‘সবচেয়ে বড় সংস্কার’ হবে। ওই বছরই ভোটার নির্ধারণের বয়স ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ করা হয়েছিল।

তিনি আরো জানান, ভোটার নির্ধারণের বয়স কমানো ও স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন চালুর ফলে আরো ৯৫ লাখ মানুষ ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারে।

এই পরিবর্তনগুলোকে সমর্থন করে কুইলটার-পিনার আরো বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্র সংকটে এবং আমরা এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে রাজনীতি তার বৈধতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।’