স্ত্রীকে মারধর করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

Published: 19 July 2025

পোস্ট ডেস্ক :


পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ আলী ওরফে জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান চৈতি। এই অভিযোগে চৈতি ঢাকা ও যশোরে আদালতে পৃথক মামলা করেছেন।

চৈতির দাবি, এ ঘটনার পর তার স্বামী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাকে হেনস্তা করবেন বলে শাসিয়েছেন। তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ আলী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চৈতি যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিধুভূষণ সড়কের দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা ফেজ-২-এর (রোড নম্বর ৫, হোল্ডিং নম্বর ৫৮) বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে মোহাম্মদ আসিফ আলী জিভালও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পূর্বের জানাশোনা থেকে পরিচয় ও অন্তরঙ্গতার এক পর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তারা ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন।

জিভাল ও চৈতির এর আগে বিয়ে হয় এবং তাদের উভয়েই তালাকপ্রাপ্ত হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। চৈতির প্রথমপক্ষে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। যা দুজনেই তাদের এফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন।
চৈতির অভিযোগ, বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই জিভাল ওই বছরের ১৯ এপ্রিল একটি গাড়ি কেনার জন্যে তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন।

কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে না পারায় জিভাল তাকে শারীরিক (চড়-থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে আঘাত) ও মানসিকভাবে অত্যাচার করেন। পরদিন তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে যশোরে বাপের বাড়ি এসে হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন। সংসার টিকিয়ে রাখতে দুই পক্ষের আপস-মীমাংসার পর তিনি ফের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান।
তিনি জানান, ১৫ নভেম্বর তিনি বাপের বাড়ি বেড়াতে এলে জিভালও আসেন। যশোরে এসেও তিনি গাড়ি কেনার সেই ২৫ লাখ টাকার জন্য ফের চাপ দিতে থাকেন।

পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যের কথা জানিয়ে ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে জিভাল এই দফায়ও তাকে মারধর করেন। চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারতে থাকেন জিভাল। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে-ছিঁড়ে যায়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭৬৪৭৫/১৪৮।
চৈতি বলেন, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৩১/১৭.০২.২০২৫।

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দুজনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল; বিষয়টি আমরা দুজনই অবগত। এসব জেনেশুনেই আমরা বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই জিভাল পল্লবী নামে আরেক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। তাদের সেই সম্পর্কে বাধা হয়েছি বিধায় যৌতুকের দাবিতে আমাকে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা (নম্বর ১৬২৫/২৪) এবং যশোর আদালতে আরেকটি মামলা (৩১/১০৩) দায়ের করি।’

তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে অবহিত করি। কিন্তু তিনি কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছি। সেখানে যৌতুকের দাবিতে মারধরসহ পরনারীতে আসক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ আলী বলেন, ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তবে কখনো সংসার করা বা একসঙ্গে থাকা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘তাকে কেন আমি নির্যাতন করব বা যৌতুক চাইব? তিনি এখন আর আমার স্ত্রী নন। মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন উল্লেখ করা হয়েছে; ও সময় আমি অন্য বিভাগের ট্রেনিংয়ে ছিলাম। আমাকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। যেহেতু মামলা করেছে, আদালতই বিচার করবেন।’