গোপালগঞ্জে চার হত্যা মামলা, আসামি ৫৪০০
পোস্ট ডেস্ক :
গত ১৬ জুলাই,গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মোট সংশ্লিষ্ট থানায় চারটি পৃথক হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে মোট ৫ হাজার ৪০০ জনকে।তথা ৫৪০০ জন।
এর মধ্যে কোটালি পাড়ায়,১৬৫৫ জনের নামে মামলা হলে মোট ১২ জন আটক হয় বলে কোটালি পাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইনকিলাব কে নিশ্চিত করেন।অপরদিকে, এই ঘটনায় ৭৪ জনকে নাময়ীয় আসামি করে মোট ৩০০ জনের নামে মামলা হয় বলে থানা সূত্রে জানাযায়, এছাড়া পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় মামলায় মোট ৪৭৫ জনের নামেে মামলা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানাযায়।
এছাড়া ও গোপালগঞ্জে যৌথবাহিনীর উপর হামলার ঘটনায় ২০ জন ছাত্রলীগের নেতা/কর্মী আটক হয়।
অপরদিকে, টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মোট ৫২১ জনের নামে মামলা হয়েছে বলে থানার অফিসার ইনচার্জ ইনকিলাব কে নিশ্চিত করছেন। উল্লেখ্য শনিবার(১৯ জুলাই) রাতে সদর থানার চারজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে এই মামলাগুলো করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন।
গোপালগঞ্জে সংঘাত-সংঘর্ষে এ পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- গোপালগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সোহেল রানা মোল্লা (৩৫), কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের হরিণাহাটি গ্রামের রমজান কাজী (১৮), ভেড়ার বাজারের ব্যাপারীপাড়া এলাকার ইমন তালুকদার (১৮) এবং থানাপাড়া এলাকার রমজান মুন্সী (৩৫)।
নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের ঘটনার বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখিত, থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার যারা বাদী হয়েছেন, তারা হলে,এস আই,মোঃ সোহেল রানা মোল্লা হত্যা মামলার বাদী হয়েছেন এসআই আবুল কালাম আজাদ, দীপ্ত সাহার হত্যা মামলার বাদী এসআই শামীম হোসেন এবং ইমন তালুকদারের হত্যা মামলার বাদী এসআই শেখ মিজানুর রহমান। এই তিনটি মামলায় প্রতিটিতে অজ্ঞাতনামা প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে, রমজান কাজী হত্যা মামলার বাদী এসআই মো. আইয়ুব আলী, যেখানে অজ্ঞাতনামা ৯০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে রমজান মুন্সীর মৃত্যু সংক্রান্ত এখনো কোনো মামলা হয়নি।
সংঘর্ষের ঘটনায় গত বুধবার থেকে রোববার (আজ) দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ৩২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেহাজতে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৫ জনকে। সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
সদর থানায় নতুন করে ৯ জনসহ মোট ১০১ জন, কাশিয়ানীতে ৭৭ জন, মুকসুদপুরে ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ২৭ জন এবং কোটালীপাড়ায় নতুন করে ৬ জনসহ মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান ইনকিলাব কে বলেন, পাঁচজন নিহতের ঘটনায় চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরেকটি মামলা রাতে হতে পারে। তিনটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ জন করে। আরেকটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয় এবং আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক। সহিংসতা ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিক সহ মোট আহত হন ১২ জন। প্রথম দিন তথা ১৭ জুলাই বিকেলে গোপালগঞ্জে সদরের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি অবনতি ঘটনায় শহরেপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন। পরে রাতে জারি করা হয় কারফিউ, যা পরবর্তীতে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে কার্যকর রাখা হয়।
গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, কাশিয়ানি,মুকসুদপুর, এলাকার সাধারন মানুষের জান মালের নিরাপওা,ব্যাবসা বানিজ্য ও দোকানপাট এবং বাজার ঘাটের সুন্দর পরিবেশ অনুকুলে রাখার জন্য পাড়া মহল্লায়, বাজারে শহর ও উপ শহরের মোড়ে মোড়ে,হাডপাতাল,জেলগেট,পৌরসভার মোড়,খালপাড়,স্টেডিয়াম চত্ব,কোর্টপাড়,টংসুর,চৌরঙ্গী সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে চলছে যৌথবাহিনীর শান্তিপূর্ন মহড়া। এই রিপোর্ট পর্যন্ত গত হওয়া সহিংসতা, ১৪৪ ধারা জারি,তিন দফা কারফিউ দেওয় ও শিথিল করার পর আর কোন অঘটন ঘটেনি।পাশাপাশি আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এই বিষয় গোপালগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং সংশ্লিষ্ট থানার সকল অফিসার ইনচার্জ এবং ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং টহলরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইনকিলাব কে জানিয়েছেন মানুষের জানমালের রক্ষা ও নিবির্ঘে জনচলাচলের পথ সুগম ও শান্তি শৃঙ্খলা পূ্র্ণ পরিবেশ রাখতে যতোদূর সম্ভব আমরা সজাগ আছি।
অপরদিকে, চারটি লাশের কেন ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফনের ব্যাখা খুজতে জানাগেল গোপালগঞ্জ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানান ‘গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলায় অপ্রত্যাশিত ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ ময়নাতদন্ত না করার বিষয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনদের বক্তব্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে ময়না তদন্ত না করে লাশ হস্তান্তর করেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য। তারা বলেন এটা আমাদের কে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসল সত্য ও ‘প্রকৃত ঘটনা এই যে, উল্লেখিত তারিখে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর জরুরী বিভাগে প্রথম কটি মৃতদেহটি হাসপাতালে আসে,।
কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষনার পর রোগীর স্বজনদের লাশ ময়নাতদন্তের কার্যক্রম শেষ করে লাশ নেয়ার কথা বললে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং একপর্যায়ে জোরপূর্বক লাশ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাকি মৃতদেহগুলোর স্বজনরা ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয় না এবং হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে জোরপূর্বক মৃতদেহ নিয়ে যায়। আমরা আইনগতভাবে লাশ দিতে চাইলে তারা তা মানেননি।
‘উল্লেখ্য এ সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং চারদিকে সংঘর্ষ চলমান থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় বোধ করেন। তাছাড়া আহত লোকজনের চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং অন্যান্য কর্মচারী আত্মনিয়োগ করায় এবং বাইরের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সাথে যোগাযোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনা পুলিশকে মোবাইল ফোনে এবং লিখিতভাবে জানানো হয়।
‘আমরা আশা করি, উল্লেখিত বিবৃতির মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।’এবং আমাদের কে কেউ ভুল বুঝবেন না।এর আগে গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। একই সঙ্গে চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে গুলি ছোড়ে বাহিনীর সদস্যরা।
এতে গুলিবিদ্ধদের গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গুলিবিদ্ধ একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার মৃতুু ঘটে তার।
গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের মরদেহ জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত না করেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে, এই খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শনিবার (১৯ জুলাই) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহতদের মরদেহ প্রয়োজনে কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে।এর ঠিক পরদিনই সহিংসতায় নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত না হওয়ার ব্যাখ্যা দিল গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।