কারাগারে ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক তিন এমপির ছবি ভাইরাল, নানা আলোচনা
পোস্ট ডেস্ক :

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনের সময় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক তিন এমপির ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ধর্ম উপদেষ্টার সঙ্গে সাবেক এই তিন এমপির ছবিটি নিয়ে উঠছে প্রশ্নও। তৈরি হয়েছে কৌতূহল।
ভাইরাল এই ছবিতে উপদেষ্টার সামনে ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি রহিম উল্লাহ, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক এমপি এম এ লতিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
লতিফের পেছনে এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন হাটহাজারী থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম। উপদেষ্টার পেছনে দাঁড়িয়ে বেসরকারি কারা পরিদর্শক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন এবং তার পাশে ছিলেন কারা উপমহাপরিদর্শক টিপু সুলতান।
উল্লেখ্য, সরকারি সফরের অংশ হিসেবে গত ১৫ জুলাই কারাগার পরিদর্শনে যান ধর্ম উপদেষ্টা। এ সময় তাদের সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ হয়।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
প্রবাসী সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ড. কনক সরওয়ার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই ছবি পোস্ট করে লিখেছেন,
‘এবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ইন্টেরিম ধর্ম ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সঙ্গে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক!
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে পরিদর্শনের সময় দেখা হওয়ার কথা বললেও তিনজন আওয়ামী নেতা উপদেষ্টার সঙ্গে জেলারের কক্ষে একান্ত বৈঠক করেন বলে জেলের একটি সূত্র জানিয়েছে ।
জেল কোডের নিয়ম অনুযায়ী এবং আমার ৯ মাসের জেল বন্দী থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যে কোনো পরিদর্শনের সময় কারাগারে বন্দি আসামিদের লকআপে থাকার কথা। পরিদর্শক জেলসুপার, মন্ত্রী, ডিসি যেই হোক তিনি সেলের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলবেন।
ছবিতে যে ভাবে দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে জেল কর্তৃপক্ষ বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের উপদেষ্টার মুখোমুখি করে দিয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, “অন্য কয়েদিদের মতো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেছেন উপদেষ্টা। তাদের মধ্যে অন্য কোনো বিষয়ে আলাপ হয়নি।”- ‘ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না’
আসলে জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে সম্পর্কহীন ‘ইন্টেরিম’দের পক্ষেই ১১ মাসের মাথায় যেয়ে আওয়ামী দুর্বৃত্তদের সঙ্গে কুশল বিনিময় সম্ভব!একান্ত বৈঠকে বসা সম্ভব!’
ওই পোস্টের মন্তব্যে সুরুজ আলম খান নামের এক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন, ‘বিতর্কিত হয়ে গেলো। পদত্যাগ করা উচিত।‘
আশরাফুল আলম নামের একজন লিখেছেন, ‘সরকারি সফরে কারাগার পরিদর্শনে অন্যান্য কয়েদিদের ন্যায় তাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।‘
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে ধর্ম উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান করছি। তাহলে কারাগারে আওয়ামী লীগের ৩ এমপির সাথে ছবি ভাইরালের বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারবেন যে, কারাগারে মান পরীক্ষা করতে গিয়ে সাক্ষাৎ হয়ে যায়! তবে, আরেকটা জিনিস জানা দরকার, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কতগুলো হজ এজেন্সির নতুন লাইসেন্স দিয়েছেন এবং কারা এগুলো পেলো?’
সাংবাদিক কাজী জেসিন বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের স্ক্রিনশট ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, ‘কী সুন্দর দৃশ্য!’ ওই পোস্টে ফজলুল হক সৈকত নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘দেশ এগিয়ে চলেছে…’
ছবিটি নিয়ে ডিআইজি টিপু সুলতান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা সেদিন সরকারি সফরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। এ সময় অন্য বন্দীদের পাশাপাশি সাবেক এমপি এমএ লতিফ ও আবু রেজা মো. নেজামউদ্দিন নদভীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকে বলছে, কৌতূহলের কিছু নেই, সরকারি সফরের অংশ হিসেবেই ধর্ম উপদেষ্টা কারাগার পরিদর্শন করেছেন।
বেসরকারি কারা পরিদর্শক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, ধর্ম উপদেষ্টা কারাগারকে সংশোধানাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি গত ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে আসেন। তিনি শুরুতে মহিলা ওয়ার্ডে যান। সেখানকার কয়েদিদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন । এভাবে তিনি বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাঁটতে হাঁটতে অন্তত ৫০ জন কয়েদির সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তাদের নানা সমস্যার কথা শোনেন। এর মধ্যে একটি ওয়ার্ডে সাবেক এমপিদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে অন্য কয়েদিদের মতো একইভাবে কথা বলেছেন।




