সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামির জামিন : সর্বত্র সমালোচনার ঝড়

Published: 12 August 2025

সিলেট অফিস :


সিলেটে বহুল আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার আসামী এসআই আকবর জামিন পেয়েছেন। গত রোববার উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারাগার থেকে বের হন তিনি। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর ডেপুটি জেলার মনিরুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসআই আকবর আগে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর কার্যক্রম শুরু হলে গত ২৫ মার্চ আকবরকে এখানে আনা হয়। জামিনে মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি এই কারাগারেই ছিলেন।
৫ বছর ধরে কারান্তরীণ ছিল আকবর। হঠাৎ করে প্রধান আসামি জামিন পাওয়ায় সিলেটে ফের আলোচনায় এসেছে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড। আইনের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আইনি লড়াইয়ে থাকা মা সালমা বেগম। কিন্তু প্রধান আসামির জামিনের খবর শুনে সোমবার ছুটে আসেন আদালত প্রাঙ্গণে। করেন আহাজারি। সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরলেন তার মনের ব্যথা। বারবার বলছিলেন- ‘এটা কেমন বিচার’। রায়হান খুনের ঘটনায় অনেক চোখ রাঙানির মুখে ছিলেন সালমা বেগম। ভয় পাননি। শেষ মুহূর্তে আসামিদের তরফ থেকে এসেছিলেন নানা প্রলোভন। সেখানেও টলেননি। ছেলে হত্যার বিচারের জন্য অবিচল থাকেন। এখন আসামিরা একে একে জামিনে বেরিয়ে যাওয়ায় হতাশ। ২০২০ সালের ১০ই অক্টোর রাতের ঘটনা। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। নগরের কাস্টঘর থেকে ধরে নিয়ে এসে এই ফাঁড়িতে পিটিয়ে খুন করা হয় রায়হান আহমদকে। পরে তাকে ছিনতাইকারী সাজিয়ে গণধোলাইয়ে রায়হান মারা গেছে বলে প্রচার করে ওই সময়ের পুলিশ। কিন্তু রায়হানের ওপর নির্যাতনের নির্মমতার দৃশ্য দেখে ক্ষুব্ধ হয় মানুষ। প্রতিবাদে নেমে আসেন রাস্তায়। বেরিয়ে আসে সত্য ঘটনা। ধরে এনে রায়হানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে সত্য বেরিয়ে আসার পর আইন চলে নিজস্ব গতিতে। একে একে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন পুলিশ সদস্য আসামিরা। ৫ বছর ধরে মামলা চলছে আদালতে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে। রায় সামনে। এই অবস্থায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে একে একে বেরিয়ে যাচ্ছেন আলোচিত এ মামলার আসামিরা। সর্বশেষ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর হোসেন। তিনিই মামলার প্রধান আসামি। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা। খবর আসে রোববার সন্ধ্যায় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ (পুরাতন) থেকে মুক্ত হয়েছেন এসআই আকবর। খবরের সত্যতা জানতে সোমবার ফোন করা হলে সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানিয়েছেন- সাবেক এসআই আকবর হোসেন জামিন পেয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে আদালতের জামিনের কাগজপত্র কারাগারে আসার পর সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। নিশ্চিত হওয়ার পর এসআই আকবরকে মুক্তি দেয়া হয়। সিনিয়র জেল সুপার জানান- রায়হান হত্যা মামলার আসামি আশেক এলাহী ছাড়া আর কোনো আসামি এখন তার কারাগারে নেই। যারা ছিলেন তারা জামিনে বেরিয়ে গেছেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ৬ জন। এর মধ্যে এসআই আকবরসহ বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক পুলিশ সদস্য এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, এসআই মো. হাসান উদ্দিন ঘটনার পর একে একে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এ মামলায় এসআই আকবরের আরেক সহযোগী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান পলাতক রয়েছেন। বর্তমানে সে বিদেশে রয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা ৫ জনের মধ্যে চারজনই জামিনে বেরিয়ে গেছেন। তারা বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে বেরিয়ে যান।
এদিকে- আলোচিত এ হত্যা মামলাটির দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন সিলেটের মানুষ। কিন্তু আসামিদের পক্ষ থেকে মামলার বিচারে কালক্ষেপণ করা হয়। বারবারই তারা মামলা নথি জামিনের নামে আদালত পরিবর্তন করে বিচারে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি করা হয় বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। রায়হানের মা সালমা বেগম সোমবার সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে রীতিমতো বিলাপ করেন। তিনি অঝোরে কাঁদেন। বলেন- ‘মামলার সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। একদিন যুক্তি-তর্ক হয়েছে। যুক্তিতর্কের পরবর্তী তারিখও নির্ধারিত ছিল। এরই মধ্যে আসামিরা জামিনে বেরিয়ে গেল।’ তিনি বলেন- ‘বিগত সরকারের আমলে রায়হান হত্যার খুনিরা একজনও জামিন পায় নি। কিন্তু বর্তমান যে সরকার, এই সরকারের আমলে খুনিরা সব জামিন পায় কেমনে। আমি যখন এক সপ্তাহ আগে পিপি সাহেবের কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই ৪ নম্বর, ৩ নম্বর আসামিরা জামিন পায় কেমনে। তখন আমারে পিপি সাহেব বলেছিলেন এরা জামিন পেতে পারে ৩ নম্বর, ৪ নম্বর আসামি। তবে ১ নম্বর আসামি কখনো জামিন পাবে না। ৩. ৪ নম্বর আসামি জামিন পাওয়ার পর এখন প্রধান যে আসামি, খুনি সে কেমনে জামিন পেলো কালকে।’