শ্রীমঙ্গলে পথে পথে মরছে বন্যপ্রাণী!

Published: 12 August 2025

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা :

মানুষের আগ্রাসন, লোভে বা অপরিকল্পিত নগরায়নে উজাড় হচ্ছে বন। বনাঞ্চলের সঙ্গে কমছে প্রাণীর সংখ্যাও। খাদ্য ও বাসস্থানের সংকট, অবৈধ শিকার, পাচার, কীটনাশকের অতি ব্যবহারের মতো নানা কারণে প্রতি বছরই পৃথিবী থেকে কোনো না কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে। সিলেটে বনবিভাগের প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৪ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার একরই বেদখলে রয়েছে। নতুন করেও বেদখল হচ্ছে অনেক জমি। প্রায় এক তৃতীয়াংশ জমি বেদখলে থাকলেও তা উদ্ধারে বনবিভাগের তৎপরতা সামান্যই বলে “দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড”-এর গত ১১ এপ্রিল ২০২১ এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একশ্রেণীর প্রভাব প্রতিপত্তিশালী লোকজন অবৈধভাবে দখল করে জনবসতি স্থাপনের কারণে বিগত অর্ধশত বছরে সিলেট বনাঞ্চলের পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্ট বনাঞ্চলের আয়তন ১ হাজার ১৫২ বর্গ কিলোমিটার থেকে মাত্র ১৩৫ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। যা’ বন্যপ্রাণি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ।
সঙ্ঘবদ্ধ প্রভাবশালী গোষ্ঠী বনাঞ্চল দখল করে বসতি স্থাপন, রিসোর্ট ও চা বাগান তৈরি, বনজ সম্পদ ধ্বংস করার কারণে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় বন্যপ্রাণী খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে ছুটে আসছে। এসব প্রাণী অনেক সময় মানুষের হাতে বা সড়কে গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বেশিরভাগই মানুষের হাতে ধরা পড়ছে। শ্রীমঙ্গল থানার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বাসাবাড়িতে, ক্ষেতের ফসলে, মাঠে ও ঝোঁপঝাড়ে বিষাক্ত সাপসহ বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী ধরা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন- শ্রীমঙ্গল দীর্ঘ দেড় যুগের উপর শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও তার আশপাশ এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন রকমের প্রায় সাত শতাধিকের উপরে বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে স্থানীয় বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা থেকে যে পিচঢালা পথটি চলে গেছে কমলগঞ্জ উপজেলার দিকে, সেটার একটি অংশে বৃহৎ জায়গাজুড়ে লাউয়াছড়া বনের উপস্থিতি। এখানেই রয়েছে দেশের মূল্যবান জীববৈচিত্র্য।
তবে, বন্যপ্রাণীদের এ অনাকাঙ্খিত মৃত্যু প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের পক্ষ থেকে। কিন্তু এই পথ দিয়ে বিচরণকারী গাড়ির চাকায় বিশেষত সিএনজিচালিত অটোরিকশার চাকার নিচে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। গত রোববার সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পথে একটি ‘মেছো বিড়াল’ প্রাণ হারিয়ে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, রাতে দ্রুত গতিতে চলাচল করা একটি সিএনজি অটোরিকশা মেছো বিড়ালটিকে মেরেছে। মুহূর্তে ছটফট করতে করতে এটি প্রাণ হারিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘ আইইউসিএন তাদের ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী বলছে, বাংলাদেশে ১৬শ’র বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। যাদের মধ্যে ৩৯০টি প্রজাতিই বিলুপ্তির হুমকির মুখে রয়েছে। এই প্রজাতিগুলোকে আইইউসিএন লাল তালিকাভুক্ত করেছে। এই ১৬শ’ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে আইইউসিএন।
শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী রেঞ্জের ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার কাজী মো. নাজমুল হক স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, লাউয়াছড়ায় গাড়ী চলাচলের গতিবেগ সংক্রান্ত আমাদের বিভিন্ন সাইনবোর্ডে আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রাস্তায় সর্বোচ্চ গতিসীমা ২০ কিলোমিটার। এই রাস্তায় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের চালকদের সঙ্গে বনবিভাগ, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সচেতনতামূলক সভা আয়োজন করা গেলে বন্যপ্রাণী রক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।