ট্রাম্পের ২.৬ বিলিয়ন ডলারের গবেষণা তহবিল কর্তন বাতিলের মামলা, লড়াইয়ে জয়ী হার্ভার্ড
পোস্ট ডেস্ক :

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় আইনি জয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে আর্থিক অনুদান বন্ধ করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেই সিদ্ধান্তের জন্যে আদালতে ধাক্কা খেলো ট্রাম্প প্রশাসন। আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই পদক্ষেপ ‘অবৈধ’।
বুধবার ফেডেরাল আদালতের বিচারক জানান, ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ বিলিয়নেরও বেশি অনুদান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ‘অবৈধ’ভাবে নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বিচারক অ্যালিশন বারোস জানান, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে প্রভাব পড়বে। এই ধরনের অনুদান বন্ধের নির্দেশকে বাতিল করার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিতে সহমত পোষণ করে বিচারক জানান, আমেরিকার প্রশাসনের কথামতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম সংশোধন না করার জন্যই ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছে প্রশাসন। ২০২৫ সালের এপ্রিলে এই সংঘাত শুরু হয়, যখন প্রশাসন ২.২ বিলিয়ন ডলারের চলমান গবেষণা অনুদান এবং ৬০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্থগিত করে। যার ফলে হার্ভার্ডের বহিরাগত তহবিলের অন্যতম বৃহৎ উৎসে প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যায়। হোয়াইট হাউস বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আতিথেয়তা প্রদানের সার্টিফিকেশন কেড়ে নেয়ার হুমকিও দেয়।
হার্ভার্ড মে মাসে মামলা দায়ের করে। যুক্তি দেয় যে এই পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকে বিপন্ন করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি আলঝাইমার রোগ, ওপিওয়েড আসক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ডিমেনশিয়া সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর গবেষণায় ব্যাঘাতের দিকে ইঙ্গিত করেছে, যেখানে বিজ্ঞানীদের কর্মী ছাঁটাই করতে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিলম্বিত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার ঘোষণা করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি তার তহবিল থেকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজনীয় গবেষণার জন্য সরিয়ে নেবে এবং এমনকি স্বেচ্ছায় ২৫% বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৮৫ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারক বারোস বলেছেন, প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো প্রশাসনিক কার্যবিধি আইন এবং নাগরিক অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, ‘হার্ভার্ডের ফেডারেল তহবিলকে ক্যাম্পাস বিদ্বেষের অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত করার কোনও বৈধ আইনি ভিত্তি নেই।’
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের রিপোর্ট অনুসারে বারোস বলেছেন, ‘ফেডারেল সরকার কোটি কোটি ডলারের গবেষণা তহবিলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না।’ ট্রাম্প প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা দীর্ঘস্থায়ী আইনি লড়াইয়ের দিকে বিষয়টিকে পরিচালিত করতে পারে। এটি কেবল হার্ভার্ডের আর্থিক ভবিষ্যতই নয়, বরং ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণার ওপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমাও নির্ধারণ করতে পারে।
হার্ভার্ড বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, আপাতত এই সিদ্ধান্তকে একাডেমিক স্বাধীনতার বিজয় হিসেবে স্বাগত জানানো হচ্ছে। রায়টি এই নীতিকে পুনর্ব্যক্ত করে যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত এবং স্বাধীন জ্ঞানের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে মামলাটি জাতীয়ভাবে তীব্র মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড ও ইয়েলসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আশঙ্কা করছে যে, তারাও যদি ফেডারেল আদেশের বিরোধিতা করে তবে তহবিল হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।




